আজ দ্বিতীয় পর্বে আমরা উটপাখির সংগ্রামী জীবনের আরও কিছু অংশ নিয়ে আ্লোচনা করবো, একটা মজার ব্যাপার হল যত গৃহপালিত পশু পাখি আছে তার সবই আমরা নিজেদের প্রয়োজনে বন জঙ্গল হতে সংগ্রহ করে গৃহে পালনের মাধ্যমেই গৃহপালিত করেছি, আর উট পাখি যদি ব্যাপক হারে খামারে পালন করা হয় তবে খাদ্যে তালিকায় এর গোস্ত এক গুরূত্বপূর্ন অবস্থান দখল করে নিবে, কেননা যেখানে প্রকিৃতিতে উট পাখির প্রজনন সফলতা ১০%-এরও কম সেখানে খামারে উট পাখির প্রজনন সফলতা ৯০% এর বেশি, যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।
উটপাখি সাধারণত ২-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। স্ত্রী উটপাখি পুরুষের থেকে ৬ মাস আগেই প্রজননক্ষমতা প্রাপ্ত হয়। প্রজনন ঋতু শরু হয় মার্চ অথবা এপ্রিলের পূর্বভাগে এবং তা সেপ্টেম্বরের আগেই শেষ হয়। অবশ্য এই প্রজনন প্রক্রিয়া ভূ-অঞ্চলভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। প্রজননের সমটায় পুরূষ পাখিটির যৌন চাহিদার কারনে এর লোমহীন গলা লাল বর্ন ধারন করে, মিলনে আগ্রহী স্ত্রী পাখির দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এটা এর সৃষ্টিগত বৈশিষ্ঠ, একটি এলাকার প্রধান পুরুষ উটপাখি ২ থেকে ৭টি স্ত্রী উটপাখির সমন্বয়ে গঠিত “হারেমের” কর্তৃত্ব গ্রহণের জন্য মুখ থেকে একজাতীয় ফোঁস ফোঁস শব্দ করতে থাকে। বিজয়ী প্রধান উটপাখি প্রতিটি স্ত্রী উটপাখির সাথে মিলিত হয় তবে এদের মধ্যে প্রভাবশালী একটি পুরুষ পাখি প্রধান একটি স্ত্রী উটপাখির সঙ্গে জোড়া বাঁধে। পুরুষ উটপাখি ঘনঘন পাখা আন্দোলিত করে তার সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করে। এরপর তারা আড়ালে চলে যায় ও অনাহুত সকলকে বিতাড়িত করে।
সকল স্ত্রী উটপাখি একটি ৩০-৬০ সেমি (১২-২৪ ইঞ্চি) গভীর ও ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) প্রশস্ত সাধারণ গর্তের মধ্যে ডিম পাড়ে। পুরুষ পাখিই কর্তৃক এই গর্ত খোদিত হয়। এ ই গর্তে ডিম পাড়া নিয়ে বিভিন্ন স্ত্রী পাখিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরূ হয়, কেননা ডিম পাড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হলে একটি নিরাপদ স্থান পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়, হারেমের প্রধান উটপাখি সর্বপ্রথমে ডিম পাড়ে। এরপর ডিমে তা দেয়ার সময় সে অন্যান্যদের ডিমগুলো ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট ২০টি ডিমে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) তা দেয়া শুরু করে। একটি ডিম গড়ে ১৫ সেমি (৫.৯ ইঞ্চি) লম্বা, ১৩ সেমি (৫.১ ইঞ্চি) প্রস্থ এবং ১.৪ কেজি (৩.১ পাউন্ড) ওজনের হয়ে থাকে। ডিমের খোসা পুরু ও চকচকে ক্রিম বর্ণের হয়ে থাকে। ডিমের উপরিভাগে গর্তের ন্যায় ছোট ছোট দাগ থাকে। উটপাখির ডিম সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হলেও তা অন্যান্য পাখির দৈহিক ওজনের অনুপাতে তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট। স্ত্রী উটপাখি দিনে এবং পুরুষ পাখি রাত্রে পর্যায় ক্রমে ডিমে তা দেয়। দিনের বেলা উটপাখির বাসা যেন চিহ্নিত না করা যায় সে জন্য স্ত্রী উটপাখি বালু দ্বারা নিজেকে বে−ন্ড করে এবং কৃষ্ণ বর্ণের পুরুষ পাখিকে রাতের অন্ধকারে প্রায়শ সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এভাবেই এরা শত্রু থেকে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখে। সাধারণত ৩৫-৪৫ দিন পর্যন্ত ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা ফুটে। বাচ্চাদের বেঁচে থাকার হার খুব কম হয়। এদের শত্র“ হচ্ছে, হায়েনা, শিয়াল, বেবুন, শকুন ইত্যাদি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন