বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭
মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭
রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭
উট পাখির জীবন চক্র: পর্ব-৩
উট পাখির জীবন চক্রের ধারাবাহিক আলোচনা আজ আমরা উপস্থাপন করবো করবো তৃতীয় পর্ব।দ্বিতীয় পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম ডিমে তা দেওয়া পর্যন্ত, ডিমে তা দেওয়া সম্পন্ন হলে ডিম ফুটে ছানা বের হবার পালা।
ডিমের খোলশ অনেক শক্ত ও পুরূ হয়, ডিম থেকে বাচ্চাগুলো বের হতে ঠোটে আর পা দিয়ে ডিমের প্রচিরে অনবরত আঘাত করতে থাকে, পরে এক সময় প্রচির ভেঙ্গে বাচ্চা গুলো্ একের পর এক বের হয় , আনেক সময় মা পাখি খোলশ ভেঙ্গে ছানাদের বের হয়ে আসতে সাহায্রে করে।তখন তারা অনেক ক্ষুদার্থ থাকে, প্রথম অবস্থাতে এরা ডিমের খোসার নরম প্রোটিন অংশ, তার পর ছোট পোকা, নুড়ি পাথর, ছোট গাছ খেয়ে ক্ষুদা নিবারন ও শক্তি আহরন করে, এ অবস্থায় বাবা ও মা উট পাখি শিকারী প্রানিদের ভয়ে বাচ্চাদের ণিয়ে অনেক ভয়ে ও আশংকায় থাকে। অন্যান্য শিকারী প্রানিরা বাচ্চার অস্তিত্ব টের পেলেই শুরূ হয়ে তাদের পায়তারি আর বাবা ও মা উট পাখির হয়ে এক বিশার চ্যালেন্জ, বিশেষ করে বাবা উট পাখি তখন এক রূদ্রমূর্তি ধারন করা, সারাদিনই ছানদের চারদিকে পেট্রল করতে থাকে, তারপরও ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ছানা মারা পড়ে নানা ভাবে। বাচ্চাদের বয়স যখন ১ থেকে দেড় মাস হয় তখন পরিবারের মাঝে অনেকটা সস্তি ফিরে আসে কেননা বাচ্চাগুলো এ বয়সে বেশ দ্রূত ছুটতে পারে, এ বয়সী বাচ্চাগলোর দেহের পালকগুলো স্পাইকি তাকি বিধায় দুর থেকে সজারূর মতন মনে হয়।পুরুষ পাখি বাচ্চাদেরকে খাদ্য খাওয়ানো শেখায় এবং এদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ করে।তখন উট পাখির ছানাগুলো নিজ পরিবার ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের সাথে একসাথে চলাফেরা ও খাদ্যেগ্রহন করে, এক একটি দল প্রতিদিন ১০-১২ মাইল পর্যন্ত পায়চারী করে, দলভুক্ত থাকার কারনে এদের নিরাপত্তা নিশ্চিন্ত হয়ে থাকে।
উটপাখি শীতকালে সাধারণত জোড়াবদ্ধ বা একাকী থাকে। প্রজনন ঋতু বা অত্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এরা সমাজবদ্ধ ৫ থেকে ৫০টি একত্রে বিচরণ করে, এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তি সম্পন্ন পুরূষ পাখিটি একাধিক স্ত্রী পাখির সাথে সঙ্গম করলেও স্ত্রী পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত পাখিটি রাণীর পদমর্যাদায় পেয়ে থাকে। এরা সাধারণত জেব্রা বা হরিণের সাথে বিচরণ করে। দিবাভাগে এরা চারণভূমিতে থাকে তবে জ্যোৎনালোকিত রাতেও এরা প্রায়শ ঘোরাঘুরি করে থাকে, এদের রয়েছে প্রখর দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি যার দ্বারা এরা সিংহ বা অন্য হিংস্র প্রাণীর আগমন বহু দূর থেকেই টের পায়। হিংস্র প্রাণী কর্তৃক ধাবিত হলে এরা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘন্টায় ৭০ কিমি বা প্রায় ৪৪ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। পৃথিবীতে দুই পা বিশিষ্ট প্রাণীদের মধ্যে এরাই সর্বাপেক্ষা বেশি দ্রুতগ্রামী।একটি উট পা দৌড়ানোর সময় এদের দুই পাখাকে “রাডার” হিসাবে ব্যবহার করে বলে এরা দ্রুত এদের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এ সময় লম্বা এক পদক্ষেপে এরা ১০-১৫ ফিট (৩-৫ মিটার) দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। ভূমিতে বিচরণশীল প্রাণীদের মধ্যে উটপাখি হচ্ছে দ্বিতীয় দ্রুতগ্রামী প্রাণী। আক্রান্ত হলে এরা মাটিতে শুয়ে মাথা ও গলা এমনভাবে বিছিয়ে দেয় যে তখন দূর থেকে তা মাটির টিবির মতো মনে হয়। শত্রু থেকে রক্ষা পাবার জন্য এরা এদের পা ব্যবহার করে। পায়ের লাথিতে শত্রু আহত হয় এবং অনেক সময় তাদের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
উটপাখি প্রধানত তৃণভোজী, লতা, ঘাস, দানাদার খাদ্য, ফল ও ফুল ভক্ষণ করে। অবশ্য এরা মাঝে-মধ্যে পোকা-মাকড়ও ভক্ষণ করে থাকে।
একটি পূর্ন বয়স্ক উট পাখির সাধারন বৈশিস্ঠগুলো নিচে দেখানো হল:
বৈশিস্ঠ পুরূষ উট পাখি স্ত্রী উট পাখি
বর্ন কালো ধুসর
প্রজনন ক্ষমতা বয়:প্রাপ্তি ৩০ মাস ২৪ মাস
উচ্চতা ২.৬ মিটার ২.৪ মিটার
ওজন ১৫০ কেজি ১৫০ কেজি
গতি ৭০কি:মি/ঘন্টা ৭০কি:মি/ঘন্টা
আশা করি উট পাখির জীবন চক্র আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে, কিন্তু বলাবাহুল্য প্রকিৃতিক পরিবেশে উট পাখির বেড়ে উঠাটা যত চ্যালন্জিং খামারে বেড়ে উঠাটা
উট পাখির জীবন চক্র: পর্ব-২
আজ দ্বিতীয় পর্বে আমরা উটপাখির সংগ্রামী জীবনের আরও কিছু অংশ নিয়ে আ্লোচনা করবো, একটা মজার ব্যাপার হল যত গৃহপালিত পশু পাখি আছে তার সবই আমরা নিজেদের প্রয়োজনে বন জঙ্গল হতে সংগ্রহ করে গৃহে পালনের মাধ্যমেই গৃহপালিত করেছি, আর উট পাখি যদি ব্যাপক হারে খামারে পালন করা হয় তবে খাদ্যে তালিকায় এর গোস্ত এক গুরূত্বপূর্ন অবস্থান দখল করে নিবে, কেননা যেখানে প্রকিৃতিতে উট পাখির প্রজনন সফলতা ১০%-এরও কম সেখানে খামারে উট পাখির প্রজনন সফলতা ৯০% এর বেশি, যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।
উটপাখি সাধারণত ২-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। স্ত্রী উটপাখি পুরুষের থেকে ৬ মাস আগেই প্রজননক্ষমতা প্রাপ্ত হয়। প্রজনন ঋতু শরু হয় মার্চ অথবা এপ্রিলের পূর্বভাগে এবং তা সেপ্টেম্বরের আগেই শেষ হয়। অবশ্য এই প্রজনন প্রক্রিয়া ভূ-অঞ্চলভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। প্রজননের সমটায় পুরূষ পাখিটির যৌন চাহিদার কারনে এর লোমহীন গলা লাল বর্ন ধারন করে, মিলনে আগ্রহী স্ত্রী পাখির দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এটা এর সৃষ্টিগত বৈশিষ্ঠ, একটি এলাকার প্রধান পুরুষ উটপাখি ২ থেকে ৭টি স্ত্রী উটপাখির সমন্বয়ে গঠিত “হারেমের” কর্তৃত্ব গ্রহণের জন্য মুখ থেকে একজাতীয় ফোঁস ফোঁস শব্দ করতে থাকে। বিজয়ী প্রধান উটপাখি প্রতিটি স্ত্রী উটপাখির সাথে মিলিত হয় তবে এদের মধ্যে প্রভাবশালী একটি পুরুষ পাখি প্রধান একটি স্ত্রী উটপাখির সঙ্গে জোড়া বাঁধে। পুরুষ উটপাখি ঘনঘন পাখা আন্দোলিত করে তার সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করে। এরপর তারা আড়ালে চলে যায় ও অনাহুত সকলকে বিতাড়িত করে।
সকল স্ত্রী উটপাখি একটি ৩০-৬০ সেমি (১২-২৪ ইঞ্চি) গভীর ও ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) প্রশস্ত সাধারণ গর্তের মধ্যে ডিম পাড়ে। পুরুষ পাখিই কর্তৃক এই গর্ত খোদিত হয়। এ ই গর্তে ডিম পাড়া নিয়ে বিভিন্ন স্ত্রী পাখিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরূ হয়, কেননা ডিম পাড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হলে একটি নিরাপদ স্থান পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়, হারেমের প্রধান উটপাখি সর্বপ্রথমে ডিম পাড়ে। এরপর ডিমে তা দেয়ার সময় সে অন্যান্যদের ডিমগুলো ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট ২০টি ডিমে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) তা দেয়া শুরু করে। একটি ডিম গড়ে ১৫ সেমি (৫.৯ ইঞ্চি) লম্বা, ১৩ সেমি (৫.১ ইঞ্চি) প্রস্থ এবং ১.৪ কেজি (৩.১ পাউন্ড) ওজনের হয়ে থাকে। ডিমের খোসা পুরু ও চকচকে ক্রিম বর্ণের হয়ে থাকে। ডিমের উপরিভাগে গর্তের ন্যায় ছোট ছোট দাগ থাকে। উটপাখির ডিম সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হলেও তা অন্যান্য পাখির দৈহিক ওজনের অনুপাতে তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট। স্ত্রী উটপাখি দিনে এবং পুরুষ পাখি রাত্রে পর্যায় ক্রমে ডিমে তা দেয়। দিনের বেলা উটপাখির বাসা যেন চিহ্নিত না করা যায় সে জন্য স্ত্রী উটপাখি বালু দ্বারা নিজেকে বে−ন্ড করে এবং কৃষ্ণ বর্ণের পুরুষ পাখিকে রাতের অন্ধকারে প্রায়শ সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এভাবেই এরা শত্রু থেকে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখে। সাধারণত ৩৫-৪৫ দিন পর্যন্ত ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা ফুটে। বাচ্চাদের বেঁচে থাকার হার খুব কম হয়। এদের শত্র“ হচ্ছে, হায়েনা, শিয়াল, বেবুন, শকুন ইত্যাদি।
উট পাখির জীবন চক্র: পর্ব-১
আমাদের দেশের উট পাখির চাষ ও ব্যাবসার বিপুল সম্ভবনা রয়েছে, আশা করি উট পাখিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নানা রকম শিল্প যেমন, উট পাখির গোস্তের, চামড়ার, পালকের। আমরা যারা কোন না কোন ভাবে উট পাখির সাথে জড়িত , আমার মনে হয় তাদের উট পাখি সম্পর্কে ধারনা রাখা দরকার। তাই এই পেইজটাতে কিছু তথ্য দিয়ে সকলকে অনুপ্রানিত করতে চাইছি। দেশি, বিদেশি নানা আর্টিকেল থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে লিখার চেষ্টা করছি। আশা করবো এই পেইজে আপনাদের গুরূত্বপূর্ন লেখা দিয়ে আমাদের সকলকে সহায়তা করবেন।
উট পাখি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি। যদিও এরা সবচেয়ে বড় পাখি কিন্তু এদের ওড়ার ক্ষমতা নেই। তবে দারুণ জোরে ছুটতে পারে এরা, দুই পা বিশিষ্ট সবচেয়ে দ্রূতগামী প্রানি। এরা ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে।এদের রয়েছে দুইটি বিশাল পাখা।পুরোটা মেলে ধরলে প্রায় ৭ ফুট হবে এর দৈর্ঘ্য। এই বড় বড় পাখার জন্যই তো এরা উড়তে না পারলেও পাখি।
ইংরেজিতে উটপাখিকে Octrich বলা হয় এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Struthio camelus । পক্ষীকুলের মধ্যে উটপাখি হচ্ছে সর্ববৃহৎ এবং এদের ডিমও আকারে সর্বাপেক্ষা বড় হয়ে থাকে। আগে আফ্রিকার উত্তর, সাহারা অঞ্চলের দক্ষিণ, পূর্ব আফ্রিকা, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বনভূমি এবং এশিয়া মাইনরে উটপাখির আবাসভূমি ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে এরা আফ্রিকার উন্মুক্ত অঞ্চলের তৃণভূমিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার আধা-মরুভূমি অথবা মরুভূমি এলাকায় বিচরণ শুরু করে।
একটি বয়স্ক উটপাখির ওজন ৬৩-১৩০ কেজি (১৪০-২৯০ পাউন্ড) হয়ে থাকে তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি পুরুষ উটপাখির ওজন ১৫৫ কেজি (৩৪০ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে। পরিণত বয়স্ক পুরুষ উটপাখির দেহের পালক সাধারণত কালো বর্ণের হয় এবং পাখা সাদা বর্ণের ও লেজের পালক হলুদ বর্ণের হয়। স্ত্রী জাতীয় ও কম বয়সী পুরুষ উটপাখির দেহের পালক ধূসর-বাদামী ও সাদা বর্ণের হয়ে থাকে যার কারনে ঝোপের মাঝে স্ত্রী উট পাখিকে সহজে লক্ষ করা যায় না। পুরুষ ও স্ত্রী উভয় জাতীয় উটপাখির গলা প্রায় পালকশূন্য থাকে।
দীর্ঘ গলা ও পা এদের মাথাকে ভূমি থেকে প্রায় ৭-৯ ফুট উচ্চে রাখে এবং এদের চক্ষু ভূমিতে বিচরণশীল সকল মেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে সর্বপেক্ষা বৃহৎ বলে জানা যায়। এদের চোখ এদের মস্তক অপেক্ষা বড় হয়ে থাকে । এই বৃহৎ চক্ষুর জন্য এরা এদের শত্রূকে বহু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।এমন কি একটি শিশু উট পাখির দৃশ্টিশক্তি মানষের দৃশ্টিশক্তির চেয়ে প্রখর। এদের পা খুব শক্তিশালী হয় এবং অন্যান্য পাখিদের ন্যায় তা পালকশূন্য ও আঁশযুক্ত হয়ে থাকে। পায়ের চামড়া অনেক মোটা ও স্তরপূর্ন হয়ে থাকে। এদের পায়ে মাত্র দুইটি আঙ্গুল থাকে, বড় আঙ্গুল ৭ ইন্চি যার মধ্যে বড়োটি ৪ ইন্চি নখরযুক্ত এবং বাইরের দিকেরটি নখরশূন্য হয়। শত্রুকে মোকাবিলা করতে এরা এই পা ব্যাবহার করে, এর আঘাতে অনেক সময় হায়না, সিংহের ন্যায় বড় প্রানিও মারা পড়ে।
উভয় পাখা বিস্তার করলে তা প্রায় দুই মিটার (ছয় ফুটের অধিক) বিস্তৃত হয়। এই পাখা দ্বারা এরা বাচ্চাদেরকে ছায়া দান করে। উটপাখির ঠোঁট চেপ্টা ও চওড়া এবং মাথা একটু বাঁকানো। এদের খাদ্যথলি ও পিত্তথলি নেই। অন্যান্য পাখিদের ন্যায় বিষ্ঠার সাথে মূত্র নিষ্ক্রান্ত হয় না বরং এরা পৃথকভাবে মূত্র নিষ্কাষণ করে থাকে।
উটপাখি যৌন পরিপক্কতা লাভ করে ২-৪ বছর বয়সে। এ সময় পুরুষ পাখির উচ্চতা হয় ১.৮-২.৮ মিটার (৫.৯-৯.২ ফুট) এবং স্ত্রী উটপাখির উচ্চতা হয় ১.৭-২.০ মিটার (৫.৬-৬.৬ ফুট) । প্রথম দুই বছরে বাচ্চার বৃদ্ধি ঘটে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ সেমি (৯.৮ ইঞ্চি) করে এবং এক বছর বয়সে একটির ওজন প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম (৯৯ পাউন্ড) হয়।
শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭
মুরগীর অন্ত পরজীবী নিয়ন্ত্রণ
আমাদের দেশে আবহাওয়াজনিত কারণে পোল্ট্রিতে আন্ত্রিক পরজীবীর সংক্রমণ প্রায়শ ঘটে থাকে। তিন ধরনের আন্ত্রিক পরজীবী এ জন্য মূলত দায়ী। এগুলো হচ্ছে:
১) গোলকৃমি (Nematodes/ Roundworms)
২) ফিতাকৃমি (Cestodes/Tapeworms) এবং
৩) পাতাকৃমি (Trematodes/Flukes)
তবে উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা, অল্প সময়ে পালিত মুরগী বিশেষত ব্রয়লার পালন, খাঁচায় মুরগি পালন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ইত্যাদি কারণে হাঁস-মুরগির ভিতরের পরজীবী বা কৃমি দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে গেছে। তবু ও অনেক সময় বিশেষভাবে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গৃহপালিত মোরগ-মুরগীতে এবং ডিপ লিটারে পালিত ডিম পাড়া ও ব্রীডারের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
যে সমস্ত উপায়ে পরজীবী ক্ষতি করে থাকে: কৃমিতে আক্রান্ত হলে যে সব ক্ষতি হতে পারে সেগুলো হচ্ছে:
১) প্রতিটি কৃমিরই একটি নির্দিষ্ট আবাসস্থল রয়েছে যেখানে সে ক্ষত সৃষ্টি করে, ফলে মোরগ মুরগীর স্বাভাবিক ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে এবং মোরগ মুরগী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
২) কিছু কৃমিরয়েছে যেগুলো বিভিন্ন রোগ জীবাণু বহন করে এবং রোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
৩) অন্ত্রে যদি অধিক সংখ্যক কৃমির উপস্থিতি ঘটে তাহলে খাদ্য চলাচল ব্যাহত হয় এবং আক্রান্ত মোরগ মুরগী মারা যেতে পারে।
৪) কৃমি মোরগ মুরগীর খাদ্য থেকেই পুষ্টি গ্রহণ করে ফলে মোরগ মুরগী অপুষ্টিতে ভোগে।
৫) পরজীবী কিছু টক্সিন ছড়াতে পারে যা হাঁস মুরগির ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।
৬) মুরগি কৃমি দ্বারা আক্রন্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং যে কোন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
৭) কৃমির জন্য মোরগ মুরগির মৃত্যুহার (Mortality) সাধারণত কম হয় কিন্তু উৎপাদনে মারাত্নক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
৮) কৃমির আক্রমণে বাড়ন্ত পাখির বৃদ্বি ব্যাহত হয় এবং অবশেষে কৃশকায় (Emaciated) হয়ে মারা যায়।
মুরগির গোল বড় কৃমি: এই কৃমি দেখতে কেঁচোর মত হয় বলে এদেরকে কেঁচো কৃমি বলা হয়। এরা মুরগির ক্ষুদ্রান্তে বাস করে। এই কৃমি মুরগি ছাড়া ও গিনি ফাউল, র্টাকি, রাজহাঁস ও বন্য প্রাণিকে আক্রান্ত করে থাকে। কেঁচো ও ফড়িং এদের ডিম খেয়ে এ রোগ বিস্তারে সাহায্য করে। পূর্ণবয়স্ক মুরগির চেয়ে ছোট বাচ্চারা এ রোগে বেশি সংবেদনশীল হয়। গোল কৃমি লম্বায় ২-৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বড় কৃমিরা খাদ্য নালীতে ডিম পাড়ে যা বিষ্ঠার সাথে বের হয়ে আসে এবং তা আবার খাদ্য বা পানির মাধ্যমে সুস্থ মুরগির দেহে প্রবেশ করে তাদেরকে আক্রান্ত করে।
লক্ষণ: দৈহিক বৃদ্বি ঠিকমত হবে না। আক্রান্ত মুরগিগুলি ঝিমাবে। পালক উসকো খুসকো হবে। পাতলা পায়খানা থাকবে। ডিম পাড়া কমিয়ে দেবে।
চিকিৎসা: নিম্নোত্ত যে কোন একটি কৃমিনাশক ওষুধ আক্রান্ত মুরগিকে খাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।এরপর ২১ দিন পর পুনরায় একই নিয়মে এ ওষুধ প্রদান করতে হবে।
১) এলবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-৪৫ মিগ্রা খাদ্য বা পানির সাথে প্রদান করতে হবে।
২) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৬.২৫-১৬ মিগ্রা খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রদান করতে হবে।
৩) লিভামিজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৮-৩৬ মিগ্রা খাবার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৪) মেবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫০ মিগ্রা খাদ্যবা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৫) পাইপারাজিন এডিপেট: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৫-১ গ্রাম ।
৬) পাইপারাজিন হেক্সাহাইড্রেট: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৫ গ্রাম (লার্ভার বিরুদ্বে কাজ করে না) তবে ১.২ গ্রাম/কেজি দৈহিক ওজন হিসাবে ১০-৩০ দিন বয়সী কৃমির বিরুদ্বে কার্যকর।
৭) টেট্রামিজল হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৪০-৬০ মিগ্রা সব বয়সের কৃমির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
রোগ প্রতিরোধ: খামারের পরিবেশ সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে। বন্য পাখিসহ পূর্ণবয়স্ক মুরগির সাথে বাড়ন্ত মুরগির সংর্স্পশ রোধ করতে হবে। কেঁচো এ রোগ ছড়ায়। এজন্য মুরগি যেন কেঁচো না খায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বৃহদন্তের কৃমি হেটারকিস গেলিনেরাম: এ ধরনের কৃমি সাধারণতঃ খাদ্যনালীর সিকামে থাকে যা ১ থেকে ১.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, সাদা রং এর সুতার মত দেখতে। পায়খানার সাথে এদের ডিম আসে এবং সেখান হতে বাচ্চা, যা আবার সুস্থ মুরগি খায় এবং আক্রান্ত হয়।
হেটারাকিসের কয়েকটি প্রজাতি আছে। এগুলো হচ্ছে: ক) হে. বেরামপোরিয়া খ) হে. গ্যালিনেরাম গ) হে. প্যারিসি
লক্ষণ: মুরগি ঝিমাতে থাকে। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। ডিম পাড়া কমিয়ে দেয়। বাদামী রং এর ডায়রিয়া দেখা যায়। মুরগির শরীর শুকিয়ে যায়। পরিশেষে আক্রান্ত মুরগির মৃত্যু ঘটে।
চিকিৎসা:নিম্নোত্ত যে কোন একটি ওষুধখাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে:
ক) লিভামিসল হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩০-৪০ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
খ) টেট্রামিসল হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৪০ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
গ) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-১৬ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
ঘ) ফেনোথায়াজিন: একটি পূর্ণ বয়স্ক মুরগিকে ১ গ্রাম প্রদান করতে হবে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা: খামারে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। খাদ্য ও পানি যেন বিষ্ঠা দ্বারা দূষিত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রুটিন অনুযায়ী কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
ক্যাপিলারিয়া: এই রোগ ক্যাপিলারিয়া গণভুত্ত বিভিন্ন প্রজাতি দ্বারা সৃষ্ট হয়ে থাকে।এই কৃমি দেখতে চুল বা সুতার তাই এদেরকে সুতাকৃমি বা চুল কৃমি বলে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ রোগ হয়ে থাকে। এ ধরনের কৃমি মুরগির খাদ্যনালীর উপরের অংশে বিশেষ করে ইসোফেগাস এবং ক্রপ অংশে থাকে। এটি লম্বায় ১ হতে ৬ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। এদের ডিম পায়খানার সাথে আসে এবং সুস্থ মুরগির খাদ্যের সাথে পেটের ভিতরে যায় এবং সেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমিতে রুপান্তরিত হয়। মুরগি ছাড়া ও হাঁস,কবুতর, টারকি ও অন্যান্য বন্য পাখিতে ও এ রোগ হয়। কেঁচো মাধ্যমিক পোষক হিসাবে এ রোগের সংক্রমণ ঘটায়। মোরগ মুরগী দূষিত খাদ্য বা পানি অথবা মাধ্যমিক পোষক ভক্ষণ করে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
লক্ষণ: অল্প সংখ্যক কৃমির আক্রমণে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অধিক সংখ্যক কৃমির সংক্রমণে বর্ধনশীল মুরগির দৈহিক বৃদ্বি ব্যাহত হয়। ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন হ্রাস পায় । তাছাড়া এসব ডিমের উর্বরতা শত্তি ও কম হয়। পালক এলোমেলো থাকে। পাতলা পায়খানা হবে। ওজন হ্রাস পায় এবং ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মুরগির স্বাভাবিক পানি পান হ্রাস পায়। রত্তশূন্যতা দেখা দেয়। আক্রান্ত মুরগি ক্রমশ শুকিয়ে যায় এবং পরিশেষে মৃত্যু ঘটে থাকে।
চিকিৎসা: নিম্নোত্ত যেকোন একটি কৃমিনাশক ওষুধ খাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে প্রদান করতে হবে।
১) লিভামিজল ফসফেট/হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-৪৮ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
২) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫-৬.২৫ মিগ্রা অথবা ৬ গ্রাম ২৫% WP ১৫ কেজি খাদ্যের সাথে মিশিয়ে পরপর ৪ দিন খাওয়াতে হবে।
৩) মেথিরিডিন: প্রতি ১০০ মিলি খাবার পানিতে ২০০-৪৫০ মিগ্রা মিশিয়ে মুরগির ঝাঁকে ২৪ ঘন্টার জন্য পান করতে দিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ: খামারে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। খাবার পানি বা খাদ্য বিষ্ঠার সংর্স্পশে যেন না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাধ্যমিক পোষক কেঁচোর সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। ঝাঁকে নতুন মুরগি প্রবেশ করানোর আগে কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
ফিতা কৃমি: বেশ কয়েক ধরনের ফিতা কৃমি মুরগিকে আক্রান্ত করে থাকে। এদের কোনটা ১ মিমি থেকে ও ছোট আবার কোনটা ২৫ সেমি এর মত লম্বা হতে পারে। এসব কৃমি খাদ্যনালীর মাঝে থাকে। কৃমির ডিম বিষ্ঠার সাথে বাইরে আসে এবং শামুক, ঝিনুক, মাছি বা পিঁপড়া ইত্যাদি যেখানে যেটা প্রযোজ্য তার ভিতর প্রবেশ করে। হাঁস মুরগি যখন এসব বাহক প্রাণী খায় তখন এরা নতুনভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ: রোগের তীব্রতা ফিতাকৃমির প্রজাতি ও মুরগির বয়সের উপর নির্ভরশীল। সাধারণত মুরগির বাচ্চা এই কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত মুরগির খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেয় ও পানি র পিপাসা বৃদ্বি পায়। ফিতা কৃমির সংক্রমণের ফলে রত্তশূন্যতা দেখা দেয় ও মুরগি কৃশকায় হয়ে পড়ে। সংক্রমণ মারাত্নক হলে অল্প বয়সী মুরগি মৃত্যু হয়। ডিমপাড়া মুরগীর ডিম উৎপাদন হ্রাস পায়। পালক উসকো খুসকো থাকে। পাতলা পায়খানা হয়।
চিকিৎসা: ফিতা কৃমির চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত ওষুধের যে কোন একটি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে:
১) ডাইক্লোরোফেন: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১.২ গ্রাম। ১৫ দিন পর দ্বিতীয় মাএা প্রয়োগ করতে হবে।
২) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫ গ্রাম হিসাবে খাদ্যের সাথে দিনে একবার।
৩) অক্সফেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১১০ মিগ্রা।
৪) রেসোরান্টেল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ মিলি।
রোগ প্রতিরোধ: ফিতা কৃমির সংক্রমণে মাধ্যমিক পোষকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং রোগ প্রতিরোধের জন্য মাধ্যমিক পোষকের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তা হল:
১) কীটনাশক পদার্থ যেমন ক্লোরডোন বা প্যারাথিওন স্প্রে করে মাধ্যমিক পোষক যেমন মাছি, ফড়িং, গুবরে পোকা ইত্যাদি নিধন করতে হবে।
২) শামুক নির্মূলের জন্য কপার সালফেট ১ঃ১০০,০০০ অনুপাতে স্প্রে করলে ৮ ঘন্টার মধ্যে শামুক মারা যাবে।
৩) খামারে নিয়মিতভাবে ফিতাকৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
১) গোলকৃমি (Nematodes/ Roundworms)
২) ফিতাকৃমি (Cestodes/Tapeworms) এবং
৩) পাতাকৃমি (Trematodes/Flukes)
তবে উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা, অল্প সময়ে পালিত মুরগী বিশেষত ব্রয়লার পালন, খাঁচায় মুরগি পালন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ইত্যাদি কারণে হাঁস-মুরগির ভিতরের পরজীবী বা কৃমি দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে গেছে। তবু ও অনেক সময় বিশেষভাবে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গৃহপালিত মোরগ-মুরগীতে এবং ডিপ লিটারে পালিত ডিম পাড়া ও ব্রীডারের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
যে সমস্ত উপায়ে পরজীবী ক্ষতি করে থাকে: কৃমিতে আক্রান্ত হলে যে সব ক্ষতি হতে পারে সেগুলো হচ্ছে:
১) প্রতিটি কৃমিরই একটি নির্দিষ্ট আবাসস্থল রয়েছে যেখানে সে ক্ষত সৃষ্টি করে, ফলে মোরগ মুরগীর স্বাভাবিক ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে এবং মোরগ মুরগী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
২) কিছু কৃমিরয়েছে যেগুলো বিভিন্ন রোগ জীবাণু বহন করে এবং রোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
৩) অন্ত্রে যদি অধিক সংখ্যক কৃমির উপস্থিতি ঘটে তাহলে খাদ্য চলাচল ব্যাহত হয় এবং আক্রান্ত মোরগ মুরগী মারা যেতে পারে।
৪) কৃমি মোরগ মুরগীর খাদ্য থেকেই পুষ্টি গ্রহণ করে ফলে মোরগ মুরগী অপুষ্টিতে ভোগে।
৫) পরজীবী কিছু টক্সিন ছড়াতে পারে যা হাঁস মুরগির ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।
৬) মুরগি কৃমি দ্বারা আক্রন্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং যে কোন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
৭) কৃমির জন্য মোরগ মুরগির মৃত্যুহার (Mortality) সাধারণত কম হয় কিন্তু উৎপাদনে মারাত্নক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
৮) কৃমির আক্রমণে বাড়ন্ত পাখির বৃদ্বি ব্যাহত হয় এবং অবশেষে কৃশকায় (Emaciated) হয়ে মারা যায়।
মুরগির গোল বড় কৃমি: এই কৃমি দেখতে কেঁচোর মত হয় বলে এদেরকে কেঁচো কৃমি বলা হয়। এরা মুরগির ক্ষুদ্রান্তে বাস করে। এই কৃমি মুরগি ছাড়া ও গিনি ফাউল, র্টাকি, রাজহাঁস ও বন্য প্রাণিকে আক্রান্ত করে থাকে। কেঁচো ও ফড়িং এদের ডিম খেয়ে এ রোগ বিস্তারে সাহায্য করে। পূর্ণবয়স্ক মুরগির চেয়ে ছোট বাচ্চারা এ রোগে বেশি সংবেদনশীল হয়। গোল কৃমি লম্বায় ২-৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বড় কৃমিরা খাদ্য নালীতে ডিম পাড়ে যা বিষ্ঠার সাথে বের হয়ে আসে এবং তা আবার খাদ্য বা পানির মাধ্যমে সুস্থ মুরগির দেহে প্রবেশ করে তাদেরকে আক্রান্ত করে।
লক্ষণ: দৈহিক বৃদ্বি ঠিকমত হবে না। আক্রান্ত মুরগিগুলি ঝিমাবে। পালক উসকো খুসকো হবে। পাতলা পায়খানা থাকবে। ডিম পাড়া কমিয়ে দেবে।
চিকিৎসা: নিম্নোত্ত যে কোন একটি কৃমিনাশক ওষুধ আক্রান্ত মুরগিকে খাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।এরপর ২১ দিন পর পুনরায় একই নিয়মে এ ওষুধ প্রদান করতে হবে।
১) এলবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-৪৫ মিগ্রা খাদ্য বা পানির সাথে প্রদান করতে হবে।
২) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৬.২৫-১৬ মিগ্রা খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রদান করতে হবে।
৩) লিভামিজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৮-৩৬ মিগ্রা খাবার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৪) মেবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫০ মিগ্রা খাদ্যবা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৫) পাইপারাজিন এডিপেট: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৫-১ গ্রাম ।
৬) পাইপারাজিন হেক্সাহাইড্রেট: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৫ গ্রাম (লার্ভার বিরুদ্বে কাজ করে না) তবে ১.২ গ্রাম/কেজি দৈহিক ওজন হিসাবে ১০-৩০ দিন বয়সী কৃমির বিরুদ্বে কার্যকর।
৭) টেট্রামিজল হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৪০-৬০ মিগ্রা সব বয়সের কৃমির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
রোগ প্রতিরোধ: খামারের পরিবেশ সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে। বন্য পাখিসহ পূর্ণবয়স্ক মুরগির সাথে বাড়ন্ত মুরগির সংর্স্পশ রোধ করতে হবে। কেঁচো এ রোগ ছড়ায়। এজন্য মুরগি যেন কেঁচো না খায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বৃহদন্তের কৃমি হেটারকিস গেলিনেরাম: এ ধরনের কৃমি সাধারণতঃ খাদ্যনালীর সিকামে থাকে যা ১ থেকে ১.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, সাদা রং এর সুতার মত দেখতে। পায়খানার সাথে এদের ডিম আসে এবং সেখান হতে বাচ্চা, যা আবার সুস্থ মুরগি খায় এবং আক্রান্ত হয়।
হেটারাকিসের কয়েকটি প্রজাতি আছে। এগুলো হচ্ছে: ক) হে. বেরামপোরিয়া খ) হে. গ্যালিনেরাম গ) হে. প্যারিসি
লক্ষণ: মুরগি ঝিমাতে থাকে। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। ডিম পাড়া কমিয়ে দেয়। বাদামী রং এর ডায়রিয়া দেখা যায়। মুরগির শরীর শুকিয়ে যায়। পরিশেষে আক্রান্ত মুরগির মৃত্যু ঘটে।
চিকিৎসা:নিম্নোত্ত যে কোন একটি ওষুধখাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে:
ক) লিভামিসল হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩০-৪০ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
খ) টেট্রামিসল হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৪০ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
গ) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-১৬ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
ঘ) ফেনোথায়াজিন: একটি পূর্ণ বয়স্ক মুরগিকে ১ গ্রাম প্রদান করতে হবে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা: খামারে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। খাদ্য ও পানি যেন বিষ্ঠা দ্বারা দূষিত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রুটিন অনুযায়ী কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
ক্যাপিলারিয়া: এই রোগ ক্যাপিলারিয়া গণভুত্ত বিভিন্ন প্রজাতি দ্বারা সৃষ্ট হয়ে থাকে।এই কৃমি দেখতে চুল বা সুতার তাই এদেরকে সুতাকৃমি বা চুল কৃমি বলে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ রোগ হয়ে থাকে। এ ধরনের কৃমি মুরগির খাদ্যনালীর উপরের অংশে বিশেষ করে ইসোফেগাস এবং ক্রপ অংশে থাকে। এটি লম্বায় ১ হতে ৬ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। এদের ডিম পায়খানার সাথে আসে এবং সুস্থ মুরগির খাদ্যের সাথে পেটের ভিতরে যায় এবং সেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমিতে রুপান্তরিত হয়। মুরগি ছাড়া ও হাঁস,কবুতর, টারকি ও অন্যান্য বন্য পাখিতে ও এ রোগ হয়। কেঁচো মাধ্যমিক পোষক হিসাবে এ রোগের সংক্রমণ ঘটায়। মোরগ মুরগী দূষিত খাদ্য বা পানি অথবা মাধ্যমিক পোষক ভক্ষণ করে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
লক্ষণ: অল্প সংখ্যক কৃমির আক্রমণে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অধিক সংখ্যক কৃমির সংক্রমণে বর্ধনশীল মুরগির দৈহিক বৃদ্বি ব্যাহত হয়। ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন হ্রাস পায় । তাছাড়া এসব ডিমের উর্বরতা শত্তি ও কম হয়। পালক এলোমেলো থাকে। পাতলা পায়খানা হবে। ওজন হ্রাস পায় এবং ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মুরগির স্বাভাবিক পানি পান হ্রাস পায়। রত্তশূন্যতা দেখা দেয়। আক্রান্ত মুরগি ক্রমশ শুকিয়ে যায় এবং পরিশেষে মৃত্যু ঘটে থাকে।
চিকিৎসা: নিম্নোত্ত যেকোন একটি কৃমিনাশক ওষুধ খাদ্য বা পানির সাথে মিশিয়ে প্রদান করতে হবে।
১) লিভামিজল ফসফেট/হাইড্রোক্লোরাইড: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০-৪৮ মিগ্রা প্রদান করতে হবে।
২) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫-৬.২৫ মিগ্রা অথবা ৬ গ্রাম ২৫% WP ১৫ কেজি খাদ্যের সাথে মিশিয়ে পরপর ৪ দিন খাওয়াতে হবে।
৩) মেথিরিডিন: প্রতি ১০০ মিলি খাবার পানিতে ২০০-৪৫০ মিগ্রা মিশিয়ে মুরগির ঝাঁকে ২৪ ঘন্টার জন্য পান করতে দিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ: খামারে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। খাবার পানি বা খাদ্য বিষ্ঠার সংর্স্পশে যেন না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাধ্যমিক পোষক কেঁচোর সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। ঝাঁকে নতুন মুরগি প্রবেশ করানোর আগে কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
ফিতা কৃমি: বেশ কয়েক ধরনের ফিতা কৃমি মুরগিকে আক্রান্ত করে থাকে। এদের কোনটা ১ মিমি থেকে ও ছোট আবার কোনটা ২৫ সেমি এর মত লম্বা হতে পারে। এসব কৃমি খাদ্যনালীর মাঝে থাকে। কৃমির ডিম বিষ্ঠার সাথে বাইরে আসে এবং শামুক, ঝিনুক, মাছি বা পিঁপড়া ইত্যাদি যেখানে যেটা প্রযোজ্য তার ভিতর প্রবেশ করে। হাঁস মুরগি যখন এসব বাহক প্রাণী খায় তখন এরা নতুনভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ: রোগের তীব্রতা ফিতাকৃমির প্রজাতি ও মুরগির বয়সের উপর নির্ভরশীল। সাধারণত মুরগির বাচ্চা এই কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত মুরগির খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেয় ও পানি র পিপাসা বৃদ্বি পায়। ফিতা কৃমির সংক্রমণের ফলে রত্তশূন্যতা দেখা দেয় ও মুরগি কৃশকায় হয়ে পড়ে। সংক্রমণ মারাত্নক হলে অল্প বয়সী মুরগি মৃত্যু হয়। ডিমপাড়া মুরগীর ডিম উৎপাদন হ্রাস পায়। পালক উসকো খুসকো থাকে। পাতলা পায়খানা হয়।
চিকিৎসা: ফিতা কৃমির চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত ওষুধের যে কোন একটি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে:
১) ডাইক্লোরোফেন: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১.২ গ্রাম। ১৫ দিন পর দ্বিতীয় মাএা প্রয়োগ করতে হবে।
২) ফেনবেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৫ গ্রাম হিসাবে খাদ্যের সাথে দিনে একবার।
৩) অক্সফেন্ডাজল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১১০ মিগ্রা।
৪) রেসোরান্টেল: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ মিলি।
রোগ প্রতিরোধ: ফিতা কৃমির সংক্রমণে মাধ্যমিক পোষকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং রোগ প্রতিরোধের জন্য মাধ্যমিক পোষকের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তা হল:
১) কীটনাশক পদার্থ যেমন ক্লোরডোন বা প্যারাথিওন স্প্রে করে মাধ্যমিক পোষক যেমন মাছি, ফড়িং, গুবরে পোকা ইত্যাদি নিধন করতে হবে।
২) শামুক নির্মূলের জন্য কপার সালফেট ১ঃ১০০,০০০ অনুপাতে স্প্রে করলে ৮ ঘন্টার মধ্যে শামুক মারা যাবে।
৩) খামারে নিয়মিতভাবে ফিতাকৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
মুরগির জটিল রোগ নির্ণয়ে দেশি পদ্ধতি
মুরগি পালন লাভজনক হলেও বিভিন্ন প্রকার রোগ এ লাভের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর বিভিন্ন রোগের কারণে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। তাছাড়াও রোগ নিরাময়, রোগ নির্ণয় করতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ঔষধ আনতে হয়। মুরগির রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময় করা সহজ হয়। কিন্তু এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে আনা হয় বিভিন্ন কিট, যা অনেক ব্যয়বহুল। এসব দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক এমদাদুল হক চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন মুরগির দুটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ সালমোনেলোসিস ও মাইকোপস্নাজমসিস নির্ণয়ের দেশি প্রযুক্তির কিট। এগুলো ব্যবহার করে খুব কম সময়ে সহজে ও অতি অল্প খরচে নির্ভুলভাবে রোগ দুটি নির্ণয় করা সম্ভব।
সালমোনেলোসিস মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে মুরগির মৃতু্যর হার বেশি এবং মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভুক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এটেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path S-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলুসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাবে।
মাইকোপস্নাজমসিস মুরগির আরেকটি মাইকোপস্নাজমাজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগেও খামারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইকোপস্নাজমা গোত্রভুক্ত চার ধরনের প্রজাতি দ্বারা মুরগি, তিতির ও অন্যান্য পাখির এ রোগ দেখা দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা আমদানি নির্ভর এবং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্প খরচে এবং নির্ভুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path Mg-Antigen Kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মাইকোপেস্নাজমসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।
"BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালীর স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সালমোনিলা ও মাইকোপস্নাজমা হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটি ৪০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গস্নাস সস্নাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। সস্নাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন (BAU Path Mg-Antigen Kit) এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উলেস্নখ্য যে, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে।
বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানি নির্ভর ব্যয়বহুল এবং এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ সনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে সস্নাইডে গোলাপী রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ উদ্ভাবিত "BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" কিট দুটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একদিকে রোগটি স্বল্প খরচে দ্রুততার সাথে সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, অপরদিকে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
লেখক: আব্দুস সালাম সাগর, ছাত্র, বাকৃবি, ময়মনসিংহ
সালমোনেলোসিস মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে মুরগির মৃতু্যর হার বেশি এবং মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভুক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এটেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path S-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলুসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাবে।
মাইকোপস্নাজমসিস মুরগির আরেকটি মাইকোপস্নাজমাজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগেও খামারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইকোপস্নাজমা গোত্রভুক্ত চার ধরনের প্রজাতি দ্বারা মুরগি, তিতির ও অন্যান্য পাখির এ রোগ দেখা দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা আমদানি নির্ভর এবং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্প খরচে এবং নির্ভুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path Mg-Antigen Kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মাইকোপেস্নাজমসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।
"BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালীর স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সালমোনিলা ও মাইকোপস্নাজমা হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটি ৪০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গস্নাস সস্নাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। সস্নাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন (BAU Path Mg-Antigen Kit) এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উলেস্নখ্য যে, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে।
বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানি নির্ভর ব্যয়বহুল এবং এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ সনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে সস্নাইডে গোলাপী রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ উদ্ভাবিত "BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" কিট দুটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একদিকে রোগটি স্বল্প খরচে দ্রুততার সাথে সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, অপরদিকে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
লেখক: আব্দুস সালাম সাগর, ছাত্র, বাকৃবি, ময়মনসিংহ
মুরগির বাচ্চা বড় করা
বাচ্চা বড় করার বিভিন্ন উপায়
বাচ্চা বড় করার জায়গা বা ঘরটা এমন হওয়া দরকার যেন সেখানে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা তার দরকারি জিনিস পর্যাপ্ত পরিমাণে পায়। এখানে বাচ্চার প্রাথমিক দরকার তাপ। ইংরেজীতে জায়গাটা বা ঘরটাকে বলা হয় ব্রডিং ইউনিট(brooding unit)।
৮ সপ্তাহ পরে বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাচ্চা পালন (গ্রুইং পেন-growing pen) ঘরে। এখানে বাচ্চা থাকবে ৮ সপ্তাহ থেকে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত । এখন বাচ্চারা বেশ বড় হয়ে গেছে । ব্রয়লার মুরগি ৮ সপ্তাহ পরে যায় বিক্রির জায়গায়। আর বাচ্চা মুরগি বাচ্চা পালন ঘরে। ২০ সপ্তাহ পরে বাচ্চা মুরগি(pullets) যায় পাকাপাকিভাবে ডিমপাড়া ঘরে। ইংরেজিতে বলে লেয়িং পেনস(Laying Pens), ২০ সপ্তাহ পরে মুরগি পালন করবার জন্য খাচাও অনেকে ব্যবহার করেন। এখানে ডিম দেওয়া মুরগি ৭৮-৮০ সপ্তাহ থাকে। এরপরেই মুরগি বাজারে মাংস হয়ে বিক্রি হতে চলে যায়।
একদিনের মুরগির বাচ্চাকে ২ ভাবে বড় করা যায়, যেমন-
(১) স্বাভাবিক ভাবে (২) কৃত্রিম ভাবে।
বাচ্চা পালনে বিস্তৃত পরিসরে যাবার আগে এটা জানা দরকার যে কৃত্রিমভাবে ডিম ফুটিয়ে যেসব বাচ্চা তৈরি করা হয়েছে তাদের কৃত্রিমভাবে বড় করা উচিত।
মুরগির বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে বা প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় করাঃ
৩০/৪০ বছর আগে আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গায় প্রকৃতির পরিবেশে মুরগির বাচ্চা বড় করা হত। মানুষের ক্রমাগত খাবারের চাহিদা এবং দিন গুজরানের ব্যবসায়িক হাতিয়ার হিসেবে দিনে দিনে প্রায় সব ছোট বড় খামারে কৃত্রিমভাবে ডিম ফোটানো এবং কৃত্রিমভাবে পোটানো ডিম থেকে বেড় হওয়া বাচ্চা বড় করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে ডিম ফোটাবার কারণও ছিল অনেক। আগে খাবার ডিম হিসেবে মুরগি মোরগ পালন করা হত। উৎসব এলে, অতিথি অভ্যাগতের মনোরঞ্জনে দুই একটি মুরগি জবাই করা হত। তখন বছরে ১৫/১৬৯ টি ডিম বা দুটি মোড়গ মুরগি মাংস হিসেবে একটা পরিবারে খাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। আজ সেই পরিবারেই বছরে কয়েক হাজার ডিম এবং এক কুইন্টাল মুরগির মাংস খাওয়া হয়।
একদিনের শাবক বড় করার ব্যাপারে দেশি মুরগির আদর্শ। মাতৃ-স্নেহে ভরপুর, ছোট দেহ। বাচ্চাদের সহজে চাপা দিয়ে মারে না।
দেহের মাপ অনুসারে একটি বেশি মুরগি অনায়াসে ১৫ থেকে ২০ টি বাচ্চা বড় করতে পারে। বাচ্চাদের দেহে যতটা গরম দরকার পালিকা মা মুরগি সেটা দিতে পারবে। পালিকা মাকে বাচ্চাদের কাছে ছাড়বার আগে অবশ্য পালিকার স্বাস্থ্য, বিশেষ করে তার দেহে উকুন আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
ঝুড়ি বা খাঁচা দিয়ে বাচ্চা বড় করা
এই ধরনের খাচা বা ঝুড়ি নানা ধরনের জিনিস দিয়ে হতে পারে। প্যাকিং বাক্স, কাঠের বাক্স, ফুটোওলা গামলা, বড়ো টব প্রভূতি। এই খাচা দুই ফিট উচু হলেই যথেষ্ট। তবে দেখতে হবে খাচা যেন খুকনো, টেকসই, সস্তা, জায়গাবহুল এবং নিরাপত্তাজনক হয় সস্তার কথা মনে রেখে। খাচার মোট জায়গা হবে ৪ বর্গ ফুটের মতো। উচ্চতায় সামনের দিকে ১৮", মাথার দিকে ঢাকা কিন্তু ঢালু থাকবে।
মা এবং বাচ্চাদের খাবারঃ
প্রথম সপ্তাহে বাচ্চা প্রতি অল্প পরিমাণ খাবার বারে বারে দিতে হবে। দুই ঘন্টা অন্তর হলে ভালো হয়। খাবার থাকবে বাচ্চা মুরগির সুষম খাদ্য যেটা পানিতে বা দুধে মিশিয়ে কাদা কাদা করে নিতে হবে। প্রথমে খাবার দিতে হবে সমতল কোনো পাত্রে।
পালিকা মুরগিকে দিতে হবে ভেজা অথবা শুকনো সুষম মুরগি খাদ্য। যে সুষম খাদ্যের মুরগিটির বাড় এনে দেবে। মুরগির খাবার এমনভাবে দিতে হবে যাতে বাচ্চা মুরগি সেখানে মুখ দিতে না পারে। বাচ্চা এবং ধাত্রী মায়ের জন্য প্রচুর পরিষ্কার ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
খাঁচা বা বাচ্চাদের আশ্রয় স্থান রীতিমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং কীটনাশক ওষুধ দিয়ে উকুন, মাইট এবং টিক প্রভূতি রক্তচোষা পরজীবী কীটদের ধ্বংস করতে হবে। বাচ্চা যেখানে চরে বেড়াবে সে জায়গাটা জাল দিয়ে ঘেরা থাকবে। চরে বেড়াবার জায়গাটা যেন ইদুর বেড়ালে নষ্ট করে না দেয়। রাতের বেলায় বাদুড় এবং পেচায় উপদ্রব ঠেকাবার ব্যবস্থাও পাকাপাকি ভাবে করা উচিত।
প্রথম সপ্তাহে মারবে রোগ ৰং রাণীঙ্তে রোগের জন্য টিকা দিতে হব প্রথম সপ্তাহেই ঠোট ছেটে দিতে হবে। বাচ্চাদের বয়স ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ হলে মুরগি বসন্ত(Fowl Pox)এবং রানীক্ষেত রোগের বিরুদ্ধে টিকা নেওয়াতে হবে।
মুরগির খাঁচা এবং ঘোরাফেরার জায়গা বদল করাঃ
মুরগির বাচ্চাদের খাঁচা এবং বেড়াবার জায়গা মাঝে মাঝেই এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় সিরয়ে নিয়ে যাওয়া ভালো। এর ফলে বাচ্চাদের রোগভোগ কম হবে এবং পরজীবী আক্রমণ কমে যাবে। দিনে একবার কি দুই বার পালিকা মা এবং বাচ্চাদের সুর্যস্নান করানো ভালো।
কৃত্রিমভাবে মুরগির বাচ্চাদের বড় করা
মানে অবশ্যই বুঝতে পারছেন। কৃত্রিমভাবে যথন বড় করার কথা বলা হছ্ছে তখন পালিকা মায়ের দরকার পড়বে না। এখানে বাচ্চাদের বড় করা হয় স্রেফ কৃত্রিমভাবে বাচ্চাদের তাপ জুগিয়ে। স্বাভাবিকভাবে মুরগির বাচ্চা বড় করার চেয়ে কৃত্রিম ভাবে বড় করার কতোগুলি সুবিধে আছে তারা হল,
(১) ঋতুর যে কোন সময়ে বাচ্চা বড় করা যায়,
(২) হাজারের ওপর বাচ্চা মাত্র একজনমানুষ বড় করতে পারে।
(৩) বাচ্চা বড় করার স্বাস্থ্য বিধানগুলি এই ব্যবস্থায় সহজেই জানা যায়,
(৪) বাচ্চার পক্ষে উপযুক্ত তাপের নিয়ন্ত্রণ সুষ্ঠুভাবে পালন করা যেতে পারে,
(৫) বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যাপারটা পরিকল্পনা মোতাবেক করা যেতে পারে।
বাজারে বাচ্চাদের বড় করার শাবক ঘর(Proodes House) নানা মাপোর আর ধাপের পাওয়া যায়। এবং তাপ দেবার ব্যবস্থাও বিভিন্ন। মাপ, নির্দেশনাবলী, মুরগির সংখ্যা এবং দাম নানা ধরনের হয়।
একটি আদর্শ শাবক ঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হবে, তাপ নিয়ন্ত্রিত, নিয়মিত পরিশুদ্ধ বাতাস যোগানো, শুকনো ভাব, দরকার মতো আলো, বিচরণের খোলা জায়গা, বীজানুমুক্ত করার সহজ উপায়, বাচ্চাদের শুক্রদের থেকে রক্ষা, আগুন থেকে বাচানো, এবং সস্তায় নির্মাণ খরচ ইত্যাদি।
বাচ্চা ঘর গরম করার নানা ব্যবস্থা থাকতে পারে, কয়লা, কেরোসিন তেল, গ্যাস, বিদু্যৎ অর্থাৎ যে কোন জিনিসি যেটা স্থানীয় জায়গায় পাওয়া যাবে এবং মুরগি পালকের ধরা ছোয়ার মধ্যে হবে। তাপ নিয়ন্ত্রণের কথা যদি তোলা হয় তবে বিদু্যৎ হচ্ছে সবচেয়ে ভালো। ঝুড়ি শাবক ঘর(Basket Brooder)এবং প্যাকিং বাক্স থেকে তৈরী শাবক ঘর বাজারে খুবই চালু। অবশ্য ব্যবস্থাটা তখনই খাটবে যদি বাচ্চার সংখ্যা কম হয়। যদি বাচ্চার সংখ্যা খুবই বেশি হয় তবে ব্যাটারি শাবক ঘর খুবই কাজের। এই ব্যাটারি শাবক ঘরে বহুতল ব্যবস্থা আছে এবং খাবার দেয়ারও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে। সমস্ত ব্যাটারি শাবক ঘর স্বয়ংক্রিয় ভাবে গরম থাকবে। খুব বড় বড় খামারে আজকাল এই ধরনের শাবক ঘরে বাচ্চা বড় করা হয়।
শাবক ঘরে বাচ্চা মুরগির পরিচর্যা
(১) বাচ্চা ঘরে ঠিকমতো তাপ দিতে হবে যেটা ওপরে বলা হয়েছে। যদি স্টোভে গরম করার ব্যবস্থা থাকে তবে দেখতে হবে স্টোভে বা ল্যাম্পে কোন গন্ডগোল আছে কিনা। কোন কারনেই যেন বাচ্চারা উত্তপ্ত আলোর কাছে না পৌছাতে পারে-সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(২) ঘরে অবশ্যই স্যাতসেতে ভাব যেন না থাকে। এটা এড়ানো যাবে বাচ্চা ঘরে পুরুস্তরের বিছানা(Deep litter) বিছিয়ে।
(৩) বাচ্চারা যেন বিছানার বিচুলি (খড়) খাবার অভ্যাস না করে। বাচ্চাদের খাবার দিতে হবে বাচ্চারা ১ দিনের হলে শক্ত পিচবোর্ডের ওপর। কিছুটা বড় মুরগিদের জন্য খাবারের জায়গা (Chick hoppers)সবসময় যেন খাবারে ভর্তি থাকে। পরীক্ষিত এবং শাবকদের সুষম খাবার দিতে হবে।
(৪) টাটকা বাতাস আসবার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
(৫) বাচ্চাদের বয়স ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ হলে ওদের দাড়ে বসানো অভ্যাস করতে হবে। বাচ্চাদের খুব তাড়াতাড়ি দাড়ে বসা অভ্যাস করালে মেঝেতে ভিড় কমবে। সেই সাথে বিছানা থেকে তৈরি রোগ ব্যাধির হাত থেকেও মুক্ত থাকবে ওরা।
(৬) বাচ্চাদের সামনে পরিষ্কার মোটামুটি ঠান্ডা পানি দিনে অন্তত দুই বার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৭) বাচ্চা তিন সপ্তাহের বেশি বয়স হয়ে গেলে ওদের কুচানে ঘাস দেবার ব্যবস্থা করুন।
(৮) প্রতিদিন বাচ্চা ঘর খাবার এবং পানির পাত্র সহ পরিষ্কার করতে হবে।
(৯) নিয়মিত বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় টিকা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
(১০) সবসময় বাচ্চ ঘর যেন বাচ্চাদের ভীড়ে ভরাট না থাকে। বীড় হলে বাচ্চা বাড়বে কম এবং মারাত্নক ব্যাধির সম্ভাবনা বাড়বে।
(১১) বাচ্চা ঘর এমন জায়গায় করতে হবে যেন ঠান্ডা বাসাত এবং বৃষ্টি বাচ্চাদের ব্যতিব্যস্ত করে না তোলো।
(১২) প্রতিদিন বাচ্চাদের পরিদর্শন করুন। দিনে যতবার বেশি পারেন তত ভাল। লক্ষ্য করতে হবে কোন অস্বভাবিকতা নজরে পড়ে কিনা। সবসময়ে পশু চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
(১৩) বাচ্চাদের শাবক ঘরে আনবার আগে একবার ঘরের আসবাব, তাপমান যন্ত্র, পানি এবং খাবারের জায়গাগুলি ভালভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে। কোন অসামঞ্জস্য বা ক্রুটি থাকলে সেটা অবশ্যই ঠিক করে নিতে হবে।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।
ব্রয়লার মুরগি পালন ও পরিচর্যা
ব্রয়লার এক বিশেষ ধরনের মুরগি যার রহস্য পৃথিবীর কেবল চারটি দেশই জানে এবং এই চারটি দেশই সমস্ত জগতের ব্রয়লার মুরগির ব্যবস্থা নিয়ন্ত্র করে। ব্রয়লার আর সাধারণ পাঁচটা মরগির মতো। তবে খুবই উচু জাতের যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে প্রচন্ড নির্বাচন এবং বংশগতি ধারার বিশেষ ক্রম অনুসারে।
ব্যবসায়ের জন্য ব্রয়লার মুরগি নির্বাচনঃ
(১) একদিনের বাচ্চার ওজন হবে ৩৬ থেকে ৪০ গ্রাম। দেখা গেছে এদিনের বাচ্চার দেহের ওজন যদি ভাল হয় তবে বেচার সময় ব্রয়লার মুরগির ওজন ভালই দাড়াবে।
(২) বংশগতি ধারার ভাল ক্রিয়াকর্মঃ যদি ভাল বংশগতি ধারার মুরগির বাচ্চা না হয় তবে ব্যবসায় খুব এটা সুবিধা হবে না। প্রায়ই সময় দেখা যায় একদল ব্রয়লার মুরগি অন্য দলের চেয়ে ভাল বাড়ে, বেশি সংখ্যায় বাছে, সুলক্ষণযুক্ত, সমান এবং বেশ ভালো পরিমাণে দেহে মাংস লাগায় সুষম খাদ্য খাওয়ার অনুপাতে । যে বাচ্চা মুরগির প্রেরক অবশ্যই শৃঙ্খলের কায়দার মুরগির বাচ্চা দিয়ে যাবে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই সম্পূর্ণ ব্যবসাটি মার খাবে। আরো ভাল হয় যদি হ্যাচারি সংস্থা সমপ্রসারণ এবং কারিগরি জ্ঞান দরকার পড়লে দিতে পারে।
(৩) সুষম খাদ্য খুব উচুদের হওয়া চাই। অর্থাৎ খাওয়ার অনুপাতে দেহে যেন মাংস লাগে। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ার জন্য ব্রয়লারের দরকার একই সঙ্গে উচ্চু পর্যায়ে আমিষ এবং শক্তি বা বেশি তাপ দিতে পারে এমন খাবার। ০-৬ সপ্তাহের ব্চাচার জন্য ব্রয়লার সুশস খাদ্যে থাকবে প্রতি কেজি খাবারে আমিষ ২২.২৪% , বিপাকীয় তাপ ২৯০০-৩০০০ কিলোক্যালরি। ব্জারে যাবার আগে ব্রয়লার মুরগির সুষম কাদ্যে থাকবে ১৯-২০%, বিপাকীয় তাপ ৩০০০/৩২০০০ কিলো ক্যালরি প্রতি কেজি খাবারে। ব্রয়লার বাজারে যাবার আগের খাবার ৫-৬ সপ্তাহ বয়সে দেওয়া যেতে পারে।
(৪) আমিষ বিশেষ করে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির মধ্যে লাইসিন এবং মেথিও নাইন খবুই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এরা মুরগির বাড়ের জন্য সাহায্য করে। খাবারকে মাংসে পরিনত করে। ফলে ব্রয়লার ব্যবসায়ে পয়সা আসে।
(৫) ব্রয়লার মুরগির খাবারে মোটা আশের শতকরা হার ৬ এর বেশিদ কখনোই হবে না।
(৬) ভিটামিন A, B2, D3, B12 এবং K ভীষন প্রয়োজনীয়।
(৭) পটাসিয়াম, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট এবং জিঙ্ক কার্বনেট পৃথকভাবে ভাল করে মিশিয়ে মুরগিকে খাওয়ানো উচিত।
(৮) ব্রয়লার মুরগির খাবারে বীজঘ্ন নামমাত্র পরিমাণে মেশানো উচিত। লাভটা এই হবে বাচ্চা মুরগির দেহে সুপ্তভাবে যদি কোন রোগ থেকে থাকে তবে এই বীজঘ্ন খাওয়াবার দরুন মুরগির দেহে চট করে রোগাক্রমণ ঘটবে না।
ব্রয়লার মুরগি থেকে ভাল লাভ করতে হলে খামারীদের যা করনীয়
ব্রয়লার মুরগি খাবারে এলো আর গেল নীতি মানাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। পলে খামারে একই বয়সের মুরগি থাকবে। এবং এ বয়সী মুরগি থেকে অপর বয়সী মুরগিদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারবে না।
খামার ঘর পূর্ব পশ্চিম দিক করে হবে। বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভারো থাকা দরকার। মুরগির ঘরগুলির পরস্পর দূরত্ব হবে ১১-১২ মিটার (৩৫-৪০ ফুট)।
খামার বাড়ি তৈরী করাঃ
ঘরে মুরগি আসার আগে ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, ব্লো ল্যাম্প দিয়ে ফাক ফোকরগুলিতে পোকা মাকড় (উকুন, ছোট বড় এটুলি) মেরে দেওয়া। বাচ্চা মুরগির জায়গা গরম ব্যবস্থা, মুরগি আসবার ৪৮ ঘন্টা আগে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নেওয়া উচিত।
ব্রুডারকে খবরের কাগজ দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। তাপমাত্রা হওয়া দরকার ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)।
ব্রয়লার বাচ্চার জন্য মেঝেতে জায়গা দিতেঃ বাচ্চা পিছু জায়গা দিতে হবে ৪৫ বঃ সেমি (৭ বাঃ ইঞ্চি)। কখনোই যেন গুচ্ছের মুরগি গুদামজাত করা না হয়। বেশি বচ্চার সংখ্যা হলে পরস্পরকে কামড়া কামড়ি করবে। খাবার এবং পানির জন্য লড়াই করবে ফলে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে ক্ষতি হবে ব্যবসার।
খাবার এবং পানির জায়গাঃ
প্রথম কদিন ডিম নেবার কাটুনে কাবার দেওয়া হলে চলবে। বাচ্চা পিছু খাবার জায়গা দিতে হবে ২.৫ সিমে (১")। এই ব্যবস্থা চলবে বাচ্চার ১ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। প্রথম প্রথম খাবারের জায়গা পুরো ভরে দিলে চলবে। কিন্তু একটু বড় হয়ে যাবার পর খাবারের জায়গা আধা আধি ভর্তি করতে হবে। এভাবে চললে খাবার নষ্ট কম হবে। দিনে ৪ বার খাবারের জায়গায় দখাবার দিলে চলবে। খাবারের জায়গা বার বার ভরে দিলে মুরগি বাড়ে ভাল। ৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মুরগি প্রতি খাবারের জায়গা হবে ৫ সেমি। পরে বেড়ে সেটা দাড়াবে ৭.৫ সেমি (৩")। সমস্ত দিনভর বাচ্চাদের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি জুগিয়ে যেতে হবে। পানির জায়গা বেশি সংখ্যায় দিতে হবে। মনে রাখতে বাচ্চা ডিমপাড়া মুরগি থেকে ব্রয়লার বাচ্চা বেশি পানি খায়। গরমকালে, বিশেষ করে গরম প্রবাহ চললে মুরগি প্রচুুর পানি খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।
শাবক ঘর এবং শাবক ঘরের তাপমাত্রাঃ
বাচ্চার ঝাঁক আসবার অন্তত ৪৮ ঘন্টা আগে ঘরটি পরীক্ষা করতে হবে। পট্রথম সপ্তাহে শাবক ঘরের তাপমাত্রা হবে ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)। শাবক ঘরের তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহ ৫০ ফাঃ বা ২.৮০ সেঃ হিসেবে কমানো যেতে পারে। সেটা অবশ্য নির্ভর করবে বাইরের আবহাওয়ার ওপর।
শীতকারীন পরিচালন ব্যবস্থাঃ
বাচ্চা মুরগির বিছানা ৫" থেকে ৬" গভীর হবে। সুবিধা হলেই বিছানার ওপরে নতুন একটা বিচুলি/ খড়ের আস্তরণ দিয়ে দেওয়া ভাল। সপ্তাহে ঙ্গ বার কাটা কোদাল দিয়ে বিছানা ঘেটে দেওয়া ভাল। বিছানার জলীয় ভাব বেশি হলে চুন দিয়ে নেওয়া উচিত। চুন অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষে নেয়।
ব্রয়লার মুরগির বাজারঃ
ব্রয়লার মুরগির পৃথিবীর জুড়ে এটাই সমস্যা। ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ বা তারও বেশি শৃঙ্খল বা চেইন নিয়মে বিক্রি হয় বলে বাজার আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হয়। অর্থাৎ কতজন খাবে জেনে নিয়ে ভাত বসানোর মত। হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, ক্যান্টিন, হোস্টেল প্রভূতি শৃঙ্খল নিয়ংমে ব্রয়লার বড় মুরগি নিয়ে থাকে। এলাকা যদি খুব ঘনবসতিসম্পন্ন হয় তবে শৃঙ্খলেরত খুব জোর ৫০ থেকে ১০০টি মুরগি ২ দিনে বিক্রি করা সম্ভব। যেখানে সুনিশ্চিত বাজার আছে সেখানে ৩০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং কেজি হিসেবেও বিক্রি করা যেতে পারে।
ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যের রকমফেরঃ
(১) পাউডার বা ধুলোর মত
(২) গুলি বা ওষুধের মত ছোট ছোট ট্যাবলেটের আকারে। সাধারণত ধুলোর ম্যাস করেই ব্রয়লার মুরগিকে খাওয়ানো হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাইয়ে দেখা গেছে ৬ থেকে ১১% খাবারকে মাংসে পরিণত করা হয়েছে এবং শেষমেষ খামারির লাভ হয়েছে ৩ থেকে ১২% । অবশ্য এটা উৎপাদনের দিক থেকে । ইওরোপে ৯০% মত খাবার বস্তু ফের গুলির আকারে পরিবেশন করা হয়। আমেরিকায় ৫০% সংস্থা মুরগির সুষম খাদ্য ফের গুলির আকারে পরিবেশণ করে থাকে।
ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে সতর্কতা
ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে নিচের সতর্কগুলি মনে রাখা উচিতঃ
(১) ব্রয়লার উৎপাদনে ৬০ থেকে ৬৫% টাকা খাবারের পেছনে খরচ হয়।
(২) সুষম খাদ্যে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় জিনিস খাওয়ালে অতিরিক্ত দাম পাওয়া যায় না। কিন্তু গরম আবহাওয়া বা প্রবাহে আপনাকে অতিরিক্ত চর্বি বা তেল দিতেইত হবে।
(৩) ব্রয়লার মুরগি তার সুষম খাবারের ৬৪% আমিষ দেহের কাজে লাগাতে পারে। ব্রয়লারের প্রয়োজনীয় আমিষ তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
(ক) কলা বৃদ্ধির জন্য; ব্রয়লার মুরগির শরীরে ১৮% আমিষ আছে।
(খ) দেহের ক্ষয় রোধের জন্য; ব্রয়লার প্রতিদিন তার দেহের কেজি হিসেবে ওজনের ১৬০০ মিঃ গ্রাঃ আমিষ ক্ষয় করে।
(গ) পালক গঠনের জন্য; ব্রয়লার মুরগির পালকে ৮২% আমিষ আছে এবং গড়ে পালকের ওজন সমস্ত দেহের ৭০%।
গরমকালে ব্রয়লার সুষম খাদ্যে বেশি আমিষ দরকার শীতকালের তুলনায়। কারণটা হল মুরগি গরমকালে কম কায়।
ঠিক যতটুকু অ্যামাইনো অ্যাসিড দরকার ঠিক ততটুকুই ব্রয়লার মুরগিকে দিতে হবে। কমও নয়, বেশি তো নয়ই। যেহেতু বেশি পরিমাণে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহের ক্ষতি করে। কম অ্যামইনো অ্যাসিড আবার দেহের বৃদ্ধিকে রোধ করে দেবে।
মাদি ব্রয়লার মুরগির চেয়ে মদ্দা ব্রয়লার মুরগি তাড়াতাড়ি বাড়ে। সুতরাং খামারের ভালর জন্য মাদি মদ্দা একসঙ্গে না পালন করে আলাদা আলাদা করা লাভজনক। প্রথম চার সপ্তাহ মদ্দা মাদিদ ব্রয়লার মুরগির আমিষের প্রয়োজন একই রকম। ৪ সপ্তাহ পরে মদ্দা ব্রয়লার মাদির চেয়ে ২% থেকে ৪ % বেশি আমিষের দরকার হয়। মাদিকে বেশি আমিষ দিলে সেটা খুব একটা কাজে আসে না।
ব্রয়লার মুরগির জন্য খনিজ এবং ভিটামিন
সত্যিকথা বলতে পরিমাণ এবং উৎকর্ষকতা দুটো ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যে দরকার। আরো দরকার খনিজ পদার্থের পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা। এই সমঝোতা অবশ্য খাদ্যের উপাদানের সঙ্গেও থাকা দরকার। খনিজ পদার্থের বেশি বা কম হওয়া দুটোই খনিজ পদার্থের মুল উদ্দেশ্য দেহের বাড়কে ব্যাহত করবে। ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মধ্যে সহযোগিতা খুবই দরকারী। খাবারের সমস্ত ক্যালসিয়াম যেন ১% গন্ডি কখনো না পেরিয়ে যায়।
ভিটামিন খাদ্য বিপাক এবং বিশ্লেষণ বিশেষ সহযোগিতা দেখায় । ফলে মুরগির দেহের বাড় ঠিক থাকে। রোগ ভোগ কম হয়। প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা কাজ আছে যা একই বইতে পরির্বতে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
ব্রয়লার খামারের পরিচালন ব্যবস্থা
(ক) খাবারকে দেহে লাগাবার ব্যবস্থাঃ
এটা বের করা হয় ব্রয়লার মোট যে বারটা খেল তাকে ব্রয়লার মুরগির কতটা ওজন পেল সেই ওজনকে দিয়ে ভাগ করে।
(খ) প্রতি কেজি ব্রয়লার ওজনের জন্য কত মুল্যের খাবার খেলঃ
এটা বের করা হয় খাবারকে দেহে লাগাবার অনুপাতকে প্রতি কেজি খাবারের মূল্যকে গুণ করে।
(গ) মোট সুবিধা প্রতি একক মেঝের জায়গা হিসেবেঃ
এটা বের করা হয় মোট খরচকে (বাচ্চার দাম, খাবার, ওষুধ পত্র) ব্রয়লার মুরগি বেচার আয় থেকে এবং বিয়োগফলকে মেঝের বর্গফুটকে ভাগ করে।
শতকরা বাচার হার = ১০০-শতকরা মৃতু্যর হার। উৎপাদন সংখ্যা (ইংরেজিতে বলে production number) একটি আন্তর্জাতিক সংখ্যা। এই সংখ্যার দ্বারা কারিগরির ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যায়।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।
ব্রয়লার পালনে কিছু সমস্যা ও এর প্রতিকার
ব্রয়লার লালন পালনে খামারি ভাইয়েরা মাঝে মধ্যেই নানা রকম সমস্যায় পড়েন। সময় মতো এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য খামারিকে চৌকস না হয়ে উপায় নেই। একজন চৌকস খামারি হিসেবে ব্রয়লার পালনে যেসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে চলুন সেটা জেনে নিই।
ব্রয়লার পালনে সমস্যা : ব্রয়লার পালনে খামারি ভাইয়েরা যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো হলোন্ধ
১. পামবোরো রোগ,
২. ওজনে পার্থক্য (একই বয়সের বাচ্চা কিছু দিন পর ছোট-বড় হওয়া),
৩. সমন্বয়হীন বাজারব্যবস্খা,
৪. খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা।
পামবোরো রোগ : খামারি ভাইয়েরা গামবোরো রোগ নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। গামবোরো ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সময়মতো টিকা দেয়া থাকলে রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এই রোগের আক্রমণ যদি ঘটেই থাকে তাহলে উন্নত ব্যবস্খাপনার মাধ্যমে মৃত্যুহার কিছুটা কমানো যায়। এই রোগে আক্রান্ত মুরগি খাদ্য ও পানি খাওয়া বìধ করে দেয়, পালক উসকো-খুসকো দেখায়। সাদা পাতলা ও দুর্গìধযুক্ত পায়খানা করে। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, হাঁটতে পারে না। অবশেষে মারা যায়। তবে এই রোগে মৃত্যুহার ৩০ ভাগের বেশি হয় না। থাইয়ের গোশতে রক্তের ছিটা দেখা যায়। একই বয়সের বাচ্চা প্রথমে বড় এবং পরে ছোট হয়ে যায়, বাচ্চা কাটলে ভিতরে রক্তের ফোঁটা দেখা যায়।
চিকিৎসা : এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধ ব্যবস্খাই একমাত্র উপায়। গামবোরো রোগ দেখা দিলে মুরগির ঘরে খাদ্য ও পানির পাত্র বাড়াতে হবে। কারণ এই রোগে খাবারের প্রতি অরুচি হওয়ায় না খেয়ে দুর্বল হয়ে মুরগি মারা যায়। তাই খাদ্য ও পানি পাত্র এমনভাবে দিতে হবে যাতে ঘুরলেই খাদ্য পায়। এই রোগে অরুচি, ডিহাইড্রেশন এবং মুরগি না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে পানিতে ভিটামিন সি, স্যালাইন ও গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ছোট-বড় হওয়া : প্রায়ই দেখা যায় একই ব্যাচে একই বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা কিছু দিন পর কতকগুলো বেশ ছোট হয়ে গেছে। এর জন্য দৃশ্যমান অদৃশ্যমান অনেক কারণ জড়িত। যেমনন্ধ কৌলিকাত্ত্বিক কারণ, পরিবেশগত ও ব্যবস্খাপনাগত কারণ। দৃশ্যমান বা পরিবেশগত কারণের মধ্যে প্রথম থেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য ও পানির পাত্র থাকা। কারণন্ধ প্রথম সপ্তাহে বিশেষ করে এক-তিন দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চার চলাচল সীমিত থাকে এবং খাদ্য না চেনার কারণে খাদ্য খাওয়ায় তেমন প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই এই সময়ে যেসব বাচ্চা এক বা দুই দিন খাদ্য ভালোভাবে খেতে পারে না সেগুলোই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরে খাদ্য খাওয়া প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ছোট হয়ে যায়। পুরুষ বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি স্ত্রী বাচ্চার চেয়ে ২০-২৫ ভাগ বেশি হওয়ায় স্ত্রী বাচ্চা ছোট হয়। মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা এক সাথে পালন করা। বিভিন্ন বয়সের মুরগির ডিম এক সাথে ফুটানো হলে পুলের ডিমের বাচ্চা ছোট হয়। ব্রুডিং পিরিয়ডে কাáিক্ষত তাপ না পাওয়া।
প্রতিকার : মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা না কিনে একই এ বা বি গ্রেডের বাচ্চা কিনতে হবে। বাচ্চা ছোট-বড় দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে আলাদা করে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। কাáিক্ষত পরিমাণ খাদ্য ও পানির পাত্র দিতে হবে।
খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা : রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম এ কথাটা মুরগি পালনের ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিযুক্ত। অনেক খামারি জেনে না জেনে রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ান, যা মোটেও ঠিক না। অসুখ না হলে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য সময়মতো টিকা দিতে হবে। সুস্খ মুরগিকে রোগ প্রতিরোধের নামে ওষুধ খাওয়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমনকি রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কমে যেতে পারে। তাই প্রতিরোধের জন্য ওষুধ না খাইয়ে সময় মতো টিকা দিতে হবে।
ব্যবসায়ের জন্য ব্রয়লার মুরগি নির্বাচনঃ
(১) একদিনের বাচ্চার ওজন হবে ৩৬ থেকে ৪০ গ্রাম। দেখা গেছে এদিনের বাচ্চার দেহের ওজন যদি ভাল হয় তবে বেচার সময় ব্রয়লার মুরগির ওজন ভালই দাড়াবে।
(২) বংশগতি ধারার ভাল ক্রিয়াকর্মঃ যদি ভাল বংশগতি ধারার মুরগির বাচ্চা না হয় তবে ব্যবসায় খুব এটা সুবিধা হবে না। প্রায়ই সময় দেখা যায় একদল ব্রয়লার মুরগি অন্য দলের চেয়ে ভাল বাড়ে, বেশি সংখ্যায় বাছে, সুলক্ষণযুক্ত, সমান এবং বেশ ভালো পরিমাণে দেহে মাংস লাগায় সুষম খাদ্য খাওয়ার অনুপাতে । যে বাচ্চা মুরগির প্রেরক অবশ্যই শৃঙ্খলের কায়দার মুরগির বাচ্চা দিয়ে যাবে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই সম্পূর্ণ ব্যবসাটি মার খাবে। আরো ভাল হয় যদি হ্যাচারি সংস্থা সমপ্রসারণ এবং কারিগরি জ্ঞান দরকার পড়লে দিতে পারে।
(৩) সুষম খাদ্য খুব উচুদের হওয়া চাই। অর্থাৎ খাওয়ার অনুপাতে দেহে যেন মাংস লাগে। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ার জন্য ব্রয়লারের দরকার একই সঙ্গে উচ্চু পর্যায়ে আমিষ এবং শক্তি বা বেশি তাপ দিতে পারে এমন খাবার। ০-৬ সপ্তাহের ব্চাচার জন্য ব্রয়লার সুশস খাদ্যে থাকবে প্রতি কেজি খাবারে আমিষ ২২.২৪% , বিপাকীয় তাপ ২৯০০-৩০০০ কিলোক্যালরি। ব্জারে যাবার আগে ব্রয়লার মুরগির সুষম কাদ্যে থাকবে ১৯-২০%, বিপাকীয় তাপ ৩০০০/৩২০০০ কিলো ক্যালরি প্রতি কেজি খাবারে। ব্রয়লার বাজারে যাবার আগের খাবার ৫-৬ সপ্তাহ বয়সে দেওয়া যেতে পারে।
(৪) আমিষ বিশেষ করে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির মধ্যে লাইসিন এবং মেথিও নাইন খবুই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এরা মুরগির বাড়ের জন্য সাহায্য করে। খাবারকে মাংসে পরিনত করে। ফলে ব্রয়লার ব্যবসায়ে পয়সা আসে।
(৫) ব্রয়লার মুরগির খাবারে মোটা আশের শতকরা হার ৬ এর বেশিদ কখনোই হবে না।
(৬) ভিটামিন A, B2, D3, B12 এবং K ভীষন প্রয়োজনীয়।
(৭) পটাসিয়াম, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট এবং জিঙ্ক কার্বনেট পৃথকভাবে ভাল করে মিশিয়ে মুরগিকে খাওয়ানো উচিত।
(৮) ব্রয়লার মুরগির খাবারে বীজঘ্ন নামমাত্র পরিমাণে মেশানো উচিত। লাভটা এই হবে বাচ্চা মুরগির দেহে সুপ্তভাবে যদি কোন রোগ থেকে থাকে তবে এই বীজঘ্ন খাওয়াবার দরুন মুরগির দেহে চট করে রোগাক্রমণ ঘটবে না।
ব্রয়লার মুরগি থেকে ভাল লাভ করতে হলে খামারীদের যা করনীয়
ব্রয়লার মুরগি খাবারে এলো আর গেল নীতি মানাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। পলে খামারে একই বয়সের মুরগি থাকবে। এবং এ বয়সী মুরগি থেকে অপর বয়সী মুরগিদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারবে না।
খামার ঘর পূর্ব পশ্চিম দিক করে হবে। বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ভারো থাকা দরকার। মুরগির ঘরগুলির পরস্পর দূরত্ব হবে ১১-১২ মিটার (৩৫-৪০ ফুট)।
খামার বাড়ি তৈরী করাঃ
ঘরে মুরগি আসার আগে ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, ব্লো ল্যাম্প দিয়ে ফাক ফোকরগুলিতে পোকা মাকড় (উকুন, ছোট বড় এটুলি) মেরে দেওয়া। বাচ্চা মুরগির জায়গা গরম ব্যবস্থা, মুরগি আসবার ৪৮ ঘন্টা আগে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নেওয়া উচিত।
ব্রুডারকে খবরের কাগজ দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। তাপমাত্রা হওয়া দরকার ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)।
ব্রয়লার বাচ্চার জন্য মেঝেতে জায়গা দিতেঃ বাচ্চা পিছু জায়গা দিতে হবে ৪৫ বঃ সেমি (৭ বাঃ ইঞ্চি)। কখনোই যেন গুচ্ছের মুরগি গুদামজাত করা না হয়। বেশি বচ্চার সংখ্যা হলে পরস্পরকে কামড়া কামড়ি করবে। খাবার এবং পানির জন্য লড়াই করবে ফলে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে ক্ষতি হবে ব্যবসার।
খাবার এবং পানির জায়গাঃ
প্রথম কদিন ডিম নেবার কাটুনে কাবার দেওয়া হলে চলবে। বাচ্চা পিছু খাবার জায়গা দিতে হবে ২.৫ সিমে (১")। এই ব্যবস্থা চলবে বাচ্চার ১ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। প্রথম প্রথম খাবারের জায়গা পুরো ভরে দিলে চলবে। কিন্তু একটু বড় হয়ে যাবার পর খাবারের জায়গা আধা আধি ভর্তি করতে হবে। এভাবে চললে খাবার নষ্ট কম হবে। দিনে ৪ বার খাবারের জায়গায় দখাবার দিলে চলবে। খাবারের জায়গা বার বার ভরে দিলে মুরগি বাড়ে ভাল। ৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মুরগি প্রতি খাবারের জায়গা হবে ৫ সেমি। পরে বেড়ে সেটা দাড়াবে ৭.৫ সেমি (৩")। সমস্ত দিনভর বাচ্চাদের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি জুগিয়ে যেতে হবে। পানির জায়গা বেশি সংখ্যায় দিতে হবে। মনে রাখতে বাচ্চা ডিমপাড়া মুরগি থেকে ব্রয়লার বাচ্চা বেশি পানি খায়। গরমকালে, বিশেষ করে গরম প্রবাহ চললে মুরগি প্রচুুর পানি খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।
শাবক ঘর এবং শাবক ঘরের তাপমাত্রাঃ
বাচ্চার ঝাঁক আসবার অন্তত ৪৮ ঘন্টা আগে ঘরটি পরীক্ষা করতে হবে। পট্রথম সপ্তাহে শাবক ঘরের তাপমাত্রা হবে ৩৫০ সেঃ (৯৫০ ফাঃ)। শাবক ঘরের তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহ ৫০ ফাঃ বা ২.৮০ সেঃ হিসেবে কমানো যেতে পারে। সেটা অবশ্য নির্ভর করবে বাইরের আবহাওয়ার ওপর।
শীতকারীন পরিচালন ব্যবস্থাঃ
বাচ্চা মুরগির বিছানা ৫" থেকে ৬" গভীর হবে। সুবিধা হলেই বিছানার ওপরে নতুন একটা বিচুলি/ খড়ের আস্তরণ দিয়ে দেওয়া ভাল। সপ্তাহে ঙ্গ বার কাটা কোদাল দিয়ে বিছানা ঘেটে দেওয়া ভাল। বিছানার জলীয় ভাব বেশি হলে চুন দিয়ে নেওয়া উচিত। চুন অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষে নেয়।
ব্রয়লার মুরগির বাজারঃ
ব্রয়লার মুরগির পৃথিবীর জুড়ে এটাই সমস্যা। ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ বা তারও বেশি শৃঙ্খল বা চেইন নিয়মে বিক্রি হয় বলে বাজার আগে থেকেই তৈরি করে নিতে হয়। অর্থাৎ কতজন খাবে জেনে নিয়ে ভাত বসানোর মত। হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, ক্যান্টিন, হোস্টেল প্রভূতি শৃঙ্খল নিয়ংমে ব্রয়লার বড় মুরগি নিয়ে থাকে। এলাকা যদি খুব ঘনবসতিসম্পন্ন হয় তবে শৃঙ্খলেরত খুব জোর ৫০ থেকে ১০০টি মুরগি ২ দিনে বিক্রি করা সম্ভব। যেখানে সুনিশ্চিত বাজার আছে সেখানে ৩০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম এবং কেজি হিসেবেও বিক্রি করা যেতে পারে।
ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যের রকমফেরঃ
(১) পাউডার বা ধুলোর মত
(২) গুলি বা ওষুধের মত ছোট ছোট ট্যাবলেটের আকারে। সাধারণত ধুলোর ম্যাস করেই ব্রয়লার মুরগিকে খাওয়ানো হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাইয়ে দেখা গেছে ৬ থেকে ১১% খাবারকে মাংসে পরিণত করা হয়েছে এবং শেষমেষ খামারির লাভ হয়েছে ৩ থেকে ১২% । অবশ্য এটা উৎপাদনের দিক থেকে । ইওরোপে ৯০% মত খাবার বস্তু ফের গুলির আকারে পরিবেশন করা হয়। আমেরিকায় ৫০% সংস্থা মুরগির সুষম খাদ্য ফের গুলির আকারে পরিবেশণ করে থাকে।
ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে সতর্কতা
ব্রয়লার মুরগির ব্যবসায়ে নিচের সতর্কগুলি মনে রাখা উচিতঃ
(১) ব্রয়লার উৎপাদনে ৬০ থেকে ৬৫% টাকা খাবারের পেছনে খরচ হয়।
(২) সুষম খাদ্যে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় জিনিস খাওয়ালে অতিরিক্ত দাম পাওয়া যায় না। কিন্তু গরম আবহাওয়া বা প্রবাহে আপনাকে অতিরিক্ত চর্বি বা তেল দিতেইত হবে।
(৩) ব্রয়লার মুরগি তার সুষম খাবারের ৬৪% আমিষ দেহের কাজে লাগাতে পারে। ব্রয়লারের প্রয়োজনীয় আমিষ তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
(ক) কলা বৃদ্ধির জন্য; ব্রয়লার মুরগির শরীরে ১৮% আমিষ আছে।
(খ) দেহের ক্ষয় রোধের জন্য; ব্রয়লার প্রতিদিন তার দেহের কেজি হিসেবে ওজনের ১৬০০ মিঃ গ্রাঃ আমিষ ক্ষয় করে।
(গ) পালক গঠনের জন্য; ব্রয়লার মুরগির পালকে ৮২% আমিষ আছে এবং গড়ে পালকের ওজন সমস্ত দেহের ৭০%।
গরমকালে ব্রয়লার সুষম খাদ্যে বেশি আমিষ দরকার শীতকালের তুলনায়। কারণটা হল মুরগি গরমকালে কম কায়।
ঠিক যতটুকু অ্যামাইনো অ্যাসিড দরকার ঠিক ততটুকুই ব্রয়লার মুরগিকে দিতে হবে। কমও নয়, বেশি তো নয়ই। যেহেতু বেশি পরিমাণে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহের ক্ষতি করে। কম অ্যামইনো অ্যাসিড আবার দেহের বৃদ্ধিকে রোধ করে দেবে।
মাদি ব্রয়লার মুরগির চেয়ে মদ্দা ব্রয়লার মুরগি তাড়াতাড়ি বাড়ে। সুতরাং খামারের ভালর জন্য মাদি মদ্দা একসঙ্গে না পালন করে আলাদা আলাদা করা লাভজনক। প্রথম চার সপ্তাহ মদ্দা মাদিদ ব্রয়লার মুরগির আমিষের প্রয়োজন একই রকম। ৪ সপ্তাহ পরে মদ্দা ব্রয়লার মাদির চেয়ে ২% থেকে ৪ % বেশি আমিষের দরকার হয়। মাদিকে বেশি আমিষ দিলে সেটা খুব একটা কাজে আসে না।
ব্রয়লার মুরগির জন্য খনিজ এবং ভিটামিন
সত্যিকথা বলতে পরিমাণ এবং উৎকর্ষকতা দুটো ব্রয়লার মুরগির সুষম খাদ্যে দরকার। আরো দরকার খনিজ পদার্থের পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা। এই সমঝোতা অবশ্য খাদ্যের উপাদানের সঙ্গেও থাকা দরকার। খনিজ পদার্থের বেশি বা কম হওয়া দুটোই খনিজ পদার্থের মুল উদ্দেশ্য দেহের বাড়কে ব্যাহত করবে। ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মধ্যে সহযোগিতা খুবই দরকারী। খাবারের সমস্ত ক্যালসিয়াম যেন ১% গন্ডি কখনো না পেরিয়ে যায়।
ভিটামিন খাদ্য বিপাক এবং বিশ্লেষণ বিশেষ সহযোগিতা দেখায় । ফলে মুরগির দেহের বাড় ঠিক থাকে। রোগ ভোগ কম হয়। প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা কাজ আছে যা একই বইতে পরির্বতে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
ব্রয়লার খামারের পরিচালন ব্যবস্থা
(ক) খাবারকে দেহে লাগাবার ব্যবস্থাঃ
এটা বের করা হয় ব্রয়লার মোট যে বারটা খেল তাকে ব্রয়লার মুরগির কতটা ওজন পেল সেই ওজনকে দিয়ে ভাগ করে।
(খ) প্রতি কেজি ব্রয়লার ওজনের জন্য কত মুল্যের খাবার খেলঃ
এটা বের করা হয় খাবারকে দেহে লাগাবার অনুপাতকে প্রতি কেজি খাবারের মূল্যকে গুণ করে।
(গ) মোট সুবিধা প্রতি একক মেঝের জায়গা হিসেবেঃ
এটা বের করা হয় মোট খরচকে (বাচ্চার দাম, খাবার, ওষুধ পত্র) ব্রয়লার মুরগি বেচার আয় থেকে এবং বিয়োগফলকে মেঝের বর্গফুটকে ভাগ করে।
শতকরা বাচার হার = ১০০-শতকরা মৃতু্যর হার। উৎপাদন সংখ্যা (ইংরেজিতে বলে production number) একটি আন্তর্জাতিক সংখ্যা। এই সংখ্যার দ্বারা কারিগরির ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যায়।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।
ব্রয়লার পালনে কিছু সমস্যা ও এর প্রতিকার
ব্রয়লার লালন পালনে খামারি ভাইয়েরা মাঝে মধ্যেই নানা রকম সমস্যায় পড়েন। সময় মতো এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য খামারিকে চৌকস না হয়ে উপায় নেই। একজন চৌকস খামারি হিসেবে ব্রয়লার পালনে যেসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে চলুন সেটা জেনে নিই।
ব্রয়লার পালনে সমস্যা : ব্রয়লার পালনে খামারি ভাইয়েরা যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো হলোন্ধ
১. পামবোরো রোগ,
২. ওজনে পার্থক্য (একই বয়সের বাচ্চা কিছু দিন পর ছোট-বড় হওয়া),
৩. সমন্বয়হীন বাজারব্যবস্খা,
৪. খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা।
পামবোরো রোগ : খামারি ভাইয়েরা গামবোরো রোগ নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। গামবোরো ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সময়মতো টিকা দেয়া থাকলে রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এই রোগের আক্রমণ যদি ঘটেই থাকে তাহলে উন্নত ব্যবস্খাপনার মাধ্যমে মৃত্যুহার কিছুটা কমানো যায়। এই রোগে আক্রান্ত মুরগি খাদ্য ও পানি খাওয়া বìধ করে দেয়, পালক উসকো-খুসকো দেখায়। সাদা পাতলা ও দুর্গìধযুক্ত পায়খানা করে। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, হাঁটতে পারে না। অবশেষে মারা যায়। তবে এই রোগে মৃত্যুহার ৩০ ভাগের বেশি হয় না। থাইয়ের গোশতে রক্তের ছিটা দেখা যায়। একই বয়সের বাচ্চা প্রথমে বড় এবং পরে ছোট হয়ে যায়, বাচ্চা কাটলে ভিতরে রক্তের ফোঁটা দেখা যায়।
চিকিৎসা : এই রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধ ব্যবস্খাই একমাত্র উপায়। গামবোরো রোগ দেখা দিলে মুরগির ঘরে খাদ্য ও পানির পাত্র বাড়াতে হবে। কারণ এই রোগে খাবারের প্রতি অরুচি হওয়ায় না খেয়ে দুর্বল হয়ে মুরগি মারা যায়। তাই খাদ্য ও পানি পাত্র এমনভাবে দিতে হবে যাতে ঘুরলেই খাদ্য পায়। এই রোগে অরুচি, ডিহাইড্রেশন এবং মুরগি না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে পানিতে ভিটামিন সি, স্যালাইন ও গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ছোট-বড় হওয়া : প্রায়ই দেখা যায় একই ব্যাচে একই বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা কিছু দিন পর কতকগুলো বেশ ছোট হয়ে গেছে। এর জন্য দৃশ্যমান অদৃশ্যমান অনেক কারণ জড়িত। যেমনন্ধ কৌলিকাত্ত্বিক কারণ, পরিবেশগত ও ব্যবস্খাপনাগত কারণ। দৃশ্যমান বা পরিবেশগত কারণের মধ্যে প্রথম থেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য ও পানির পাত্র থাকা। কারণন্ধ প্রথম সপ্তাহে বিশেষ করে এক-তিন দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চার চলাচল সীমিত থাকে এবং খাদ্য না চেনার কারণে খাদ্য খাওয়ায় তেমন প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই এই সময়ে যেসব বাচ্চা এক বা দুই দিন খাদ্য ভালোভাবে খেতে পারে না সেগুলোই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরে খাদ্য খাওয়া প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ছোট হয়ে যায়। পুরুষ বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি স্ত্রী বাচ্চার চেয়ে ২০-২৫ ভাগ বেশি হওয়ায় স্ত্রী বাচ্চা ছোট হয়। মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা এক সাথে পালন করা। বিভিন্ন বয়সের মুরগির ডিম এক সাথে ফুটানো হলে পুলের ডিমের বাচ্চা ছোট হয়। ব্রুডিং পিরিয়ডে কাáিক্ষত তাপ না পাওয়া।
প্রতিকার : মিশ্রিত গ্রেডের বাচ্চা না কিনে একই এ বা বি গ্রেডের বাচ্চা কিনতে হবে। বাচ্চা ছোট-বড় দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে আলাদা করে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। কাáিক্ষত পরিমাণ খাদ্য ও পানির পাত্র দিতে হবে।
খামারিদের ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা : রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম এ কথাটা মুরগি পালনের ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিযুক্ত। অনেক খামারি জেনে না জেনে রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ান, যা মোটেও ঠিক না। অসুখ না হলে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। রোগ প্রতিরোধের জন্য সময়মতো টিকা দিতে হবে। সুস্খ মুরগিকে রোগ প্রতিরোধের নামে ওষুধ খাওয়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমনকি রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কমে যেতে পারে। তাই প্রতিরোধের জন্য ওষুধ না খাইয়ে সময় মতো টিকা দিতে হবে।
মুরগি খামার গড়তে যা যা প্রয়োজন
দেশে উন্নত জাতের মুরগি পালনে জনগণের উত্সাহ দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর মুরগি পালনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়াও বেশ উপযোগী। জনগণের উত্সাহের সঙ্গে সঙ্গে সরকারও উন্নত জাতের মুরগি পালনে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কেননা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে আমিষ জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পুষ্টির অভাবে মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে দেশের অগণিত শিশুর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, উন্নত বিশ্বে বছরে মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা যেখানে ২০০; সেখানে আমাদের দেশে মাত্র ১৫ থেকে ১৬টি। এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে প্রত্যেক বসতবাড়িতে উন্নতজাতের মুরগি চাষ অপরিহার্য। উন্নত জাতের একটি মুরগি ছয় মাস বয়সে ডিমপাড়া শুরু করে এবং বছরে ২০০ থেকে ২৫০ ডিম দেয়। অন্যদিকে ব্রয়লার (মাংস উত্পাদক মুরগি) মুরগি দুই মাসেই দেড় থেকে দুই কেজি মাংস দেয়। বসতবাড়িতে অল্প শ্রম ও কম খরচে মুরগি পুষে পরিবারের প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি সহজেই মেটানো যায়। পারিবারিকভাবে মুরগি পালনের ফলে পরিবারের অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়ে, যুবক-যুবতী এমনকি বুড়ো-বুড়িরাও তাদের অবসর সময়ে কিছু না কিছু কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেন। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আপনিও একটি মুরগি নিয়ে এক মোরগের সংসার গড়তে পারেন। এতে আপনি লাভবান হবেন। মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ হবে। একটি মোরগের সংসার গড়ার আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে উন্নত মুরগি চাষের আধুনিক কলা-কৌশল।
থাকার ঘর : একটি মোরগের সংসার গড়তে প্রথমে প্রয়োজন হবে মুরগির ঘর ঠিক করা। মুরগির থাকার ঘর উচ্চতায় চার ফুট, প্রস্থে সাড়ে ৪ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৬ ফুট করুন। এর ভেতরে ডিম পাড়ার খাঁচি, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র রাখুন। আরও খেয়াল রাখবেন
(১) ঘর সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
(২) খোলামেলা স্থানে ঘর বানাবেন
(৩) ঘরের মেঝে তিন ইঞ্চি পুরু হয় এ পরিমাণ তুস, কাঠের গুঁড়া বা বালির সঙ্গে আধা কেজি গুঁড়া চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে সমানভাবে বিছিয়ে দিন।
(৪) মেঝের কাঠের গুঁড়া বা তুস ৭ দিন পরপর ওলট-পালট করে দেবেন। স্যাঁতসঁতে হলে বা জমাট বেধে গেলে তা পরিবর্তন করে দেবেন। ঘরে আটকে না রেখে বাইরেও মুরগি পালন করতে পারেন।
সংগ্রহের স্থান : উন্নত জাতের মুরগি কোথায় পাবেন এ নিয়ে ভাবনার কোনোই কারণ নেই। ঢাকার মণিপুর কেন্দ্রীয় মোরগ-মুরগি খামার থেকে কিংবা কৃষি খামার সড়কের পশুসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করুন। চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী শহরে যারা উন্নত জাতের মুরগি লালন-পালনে আগ্রহী তারা যথাক্রমে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এবং রাজশাহীর রাজবাড়ী হাট আঞ্চলিক মুরগির খামার থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারেন। এ ছাড়া সিলেট, বগুড়া, কুমিল্লা, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রংপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, সীতাকুণ্ড, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, দিনাজপুর, মাদারীপুর, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ আর জামালপুরে সরকারি মুরগি খামার আছে। স্ব-স্ব এলাকার বাসিন্দারা এসব খামার থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করে নিন।
খাদ্য : অধিক ডিম পেতে হলে মুরগিকে দৈনিক সুষম খাবার খেতে দেবেন, প্রত্যহ প্রতিটি মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও ২৫ গ্রাম সবুজ শাক-সবজি বা কচি ঘাস কুচি কুচি করে কেটে খেতে দিন।
আপনি নিজেই সুষম খাদ্য তৈরি করতে পারেন। সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো নিম্নরূপ :
খাদ্য উত্পাদন-গম/ভুট্টা ভাঙা বা চালের খুদ ৪০০ গ্রাম। গমের ভুসি ৫০ গ্রাম। চালের কুঁড়া (তুষ ছাড়া) ২৫০ গ্রাম। তিলের খৈল ১২০ গ্রাম। শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০০ গ্রাম। ঝিনুকের গুঁড়া ৭৫ গ্রাম। সুষম খাদ্য মোট ১,০০০ গ্রাম বা ১ কেজি।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা : আপনার মুরগিকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেবেন। পশুসম্পদ বিভাগ থেকে বিনামূল্যে রানীক্ষেত, কলেরা, বসন্ত রোগের প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ করতে পারেন। আরেকটু খেয়াল রাখবেন, আপনার মুরগি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিত্সালয়ের পরামর্শ নেবেন। অসুস্থ মুরগিকে চিহ্নিত করে তত্ক্ষণাত্ আলাদা করে রাখুন। তা ছাড়া রোগাক্রান্ত মুরগির বিষ্ঠা ও লালা সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখার ব্যবস্থা নেবেন।
আয়-ব্যয় : এক মোরগের সংসারের জন্য একটি ঘর (খাবার পাত্রসহ) তৈরি কর বাবদ প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হবে এবং ঘর কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে। ছয় মাস বয়সের ৯টি মুরগি এবং ১টি মোরগের ক্রয়মূল্য ২ হাজার টাকা। ১ বছর পর এ ১০টি মুরগিকে প্রায় একই দামে বিক্রি করা যাবে। ডিম কিনলে ১টির দাম পড়বে ৮ টাকা। মুরগির বাচ্চা কিনলে ১টির দাম পড়বে ৩০ টাকা। ৯টির দাম হবে ২৭০ টাকা। প্রতি মাসে মুরগির খাবার ক্রয় বাবদ প্রায় ৮০০ টাকা ব্যয় হবে। যদি আপনি নিজেই মুরগির সুষম খাবার তৈরি করেন তাহলে খরচ আরও কম হবে।
৯টি মুরগি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬টি ডিম পাওয়া যাবে। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে ১৪৪০ টাকা আয় করতে পারেন। উত্পাদিত ডিম, খাবার এবং বাচ্চা ফুটানোর ডিম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আপনার শ্রমে উত্পাদিত ডিমের একটি অংশ দিয়ে যদি বাচ্চা ফুটানো যায়, তাহলে দেশ এবং জাতি বেশ কিছু ফুটফুটে উন্নত জাতের মোরগ-মুরগির বাচ্চা পাবে।
থাকার ঘর : একটি মোরগের সংসার গড়তে প্রথমে প্রয়োজন হবে মুরগির ঘর ঠিক করা। মুরগির থাকার ঘর উচ্চতায় চার ফুট, প্রস্থে সাড়ে ৪ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৬ ফুট করুন। এর ভেতরে ডিম পাড়ার খাঁচি, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র রাখুন। আরও খেয়াল রাখবেন
(১) ঘর সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
(২) খোলামেলা স্থানে ঘর বানাবেন
(৩) ঘরের মেঝে তিন ইঞ্চি পুরু হয় এ পরিমাণ তুস, কাঠের গুঁড়া বা বালির সঙ্গে আধা কেজি গুঁড়া চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে সমানভাবে বিছিয়ে দিন।
(৪) মেঝের কাঠের গুঁড়া বা তুস ৭ দিন পরপর ওলট-পালট করে দেবেন। স্যাঁতসঁতে হলে বা জমাট বেধে গেলে তা পরিবর্তন করে দেবেন। ঘরে আটকে না রেখে বাইরেও মুরগি পালন করতে পারেন।
সংগ্রহের স্থান : উন্নত জাতের মুরগি কোথায় পাবেন এ নিয়ে ভাবনার কোনোই কারণ নেই। ঢাকার মণিপুর কেন্দ্রীয় মোরগ-মুরগি খামার থেকে কিংবা কৃষি খামার সড়কের পশুসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করুন। চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী শহরে যারা উন্নত জাতের মুরগি লালন-পালনে আগ্রহী তারা যথাক্রমে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এবং রাজশাহীর রাজবাড়ী হাট আঞ্চলিক মুরগির খামার থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারেন। এ ছাড়া সিলেট, বগুড়া, কুমিল্লা, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রংপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, সীতাকুণ্ড, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, দিনাজপুর, মাদারীপুর, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ আর জামালপুরে সরকারি মুরগি খামার আছে। স্ব-স্ব এলাকার বাসিন্দারা এসব খামার থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করে নিন।
খাদ্য : অধিক ডিম পেতে হলে মুরগিকে দৈনিক সুষম খাবার খেতে দেবেন, প্রত্যহ প্রতিটি মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও ২৫ গ্রাম সবুজ শাক-সবজি বা কচি ঘাস কুচি কুচি করে কেটে খেতে দিন।
আপনি নিজেই সুষম খাদ্য তৈরি করতে পারেন। সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো নিম্নরূপ :
খাদ্য উত্পাদন-গম/ভুট্টা ভাঙা বা চালের খুদ ৪০০ গ্রাম। গমের ভুসি ৫০ গ্রাম। চালের কুঁড়া (তুষ ছাড়া) ২৫০ গ্রাম। তিলের খৈল ১২০ গ্রাম। শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০০ গ্রাম। ঝিনুকের গুঁড়া ৭৫ গ্রাম। সুষম খাদ্য মোট ১,০০০ গ্রাম বা ১ কেজি।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা : আপনার মুরগিকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেবেন। পশুসম্পদ বিভাগ থেকে বিনামূল্যে রানীক্ষেত, কলেরা, বসন্ত রোগের প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ করতে পারেন। আরেকটু খেয়াল রাখবেন, আপনার মুরগি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিত্সালয়ের পরামর্শ নেবেন। অসুস্থ মুরগিকে চিহ্নিত করে তত্ক্ষণাত্ আলাদা করে রাখুন। তা ছাড়া রোগাক্রান্ত মুরগির বিষ্ঠা ও লালা সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখার ব্যবস্থা নেবেন।
আয়-ব্যয় : এক মোরগের সংসারের জন্য একটি ঘর (খাবার পাত্রসহ) তৈরি কর বাবদ প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হবে এবং ঘর কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে। ছয় মাস বয়সের ৯টি মুরগি এবং ১টি মোরগের ক্রয়মূল্য ২ হাজার টাকা। ১ বছর পর এ ১০টি মুরগিকে প্রায় একই দামে বিক্রি করা যাবে। ডিম কিনলে ১টির দাম পড়বে ৮ টাকা। মুরগির বাচ্চা কিনলে ১টির দাম পড়বে ৩০ টাকা। ৯টির দাম হবে ২৭০ টাকা। প্রতি মাসে মুরগির খাবার ক্রয় বাবদ প্রায় ৮০০ টাকা ব্যয় হবে। যদি আপনি নিজেই মুরগির সুষম খাবার তৈরি করেন তাহলে খরচ আরও কম হবে।
৯টি মুরগি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬টি ডিম পাওয়া যাবে। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে ১৪৪০ টাকা আয় করতে পারেন। উত্পাদিত ডিম, খাবার এবং বাচ্চা ফুটানোর ডিম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আপনার শ্রমে উত্পাদিত ডিমের একটি অংশ দিয়ে যদি বাচ্চা ফুটানো যায়, তাহলে দেশ এবং জাতি বেশ কিছু ফুটফুটে উন্নত জাতের মোরগ-মুরগির বাচ্চা পাবে।
পোলট্রি খামারে জৈব নিরাপত্তা
বার্ড ফ্লুর ভাইরাস দেশের অন্যান্য এলাকার হাঁস-মুরগির খামারে সংক্রমণ না ঘটাতে পারে সে জন্য প্রতিরোধমূলক জৈব নিরাপত্তাব্যবস্খা এখনই জোড়দার করা উচিত। এ ছাড়াও রাণীক্ষেত, গামবোরো, বসন্ত ইত্যাদি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত রোগ এ সময় বেশি হয়। এসব রোগের প্রতিকার নেই বলে প্রতিরোধব্যবস্খাই একমাত্র উপায়। কোনোভাবেই যাতে জীবাণু খামারের ভেতর প্রবেশ না করে এ জন্য জৈব নিরাপত্তাব্যবস্খা নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
১. খামারের প্রধান গেট তালা দিয়ে রাখতে হবে। ‘ জৈব নিরাপত্তা চালু আছে, প্রবেশ নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।
২. খামারের চার পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৩. খামারের শেডের পাশে খাদ্যদ্রব্য ফেলা যাবে না, এতে বন্যপাখি আসবে। বন্যপাখি বার্ড ফ্লুর ভাইরাস বহন করে।
৪. দর্শনার্থীদের এবং অন্য খামারের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
৫. খামারের ভেতরে নিয়োজিত কর্মীদের খামার কর্র্তৃক প্রদত্ত জীবাণুমুক্ত পোশাক, জুতা, টুপি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
৬. খামারের ভেতর প্রবেশের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, গাড়িসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করাতে হবে। এসব কিছুতে জীবাণুনাশক পদার্থ স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৭. খামারের ভেতর যারা থাকবে বা প্রবেশ করবে তাদের পরিধেয় সবকিছু জীবাণুমুক্ত হতে হবে।
৮. মুরগির ঘরের দরজ বìধ রাখতে হবে; যাতে বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, সাপ, বেজি ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে।
৯. এক খামারের লোক অন্য খামারে গোসল করতে জীবাণুমুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে। জীবাণু এক খামার থেকে অন্য খামারে প্রবেশ প্রতিরোধ করতে হবে।
১০. খামারের কর্মীদের বন্যপাখির দোকানে খাওয়া যাবে না।
১১. খামার পরিত্যাগের সময় খামারের বস্ত্রাদি পরিবর্তন করে হাত-পা ভালোভাবে ধুতে হবে।
১২. প্রতিটি শেডের সামনে পা ধোয়ার জীবাণুমুক্তকরণ তরল পদার্থ রাখতে হবে। শেডে প্রবেশের সময় পা জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করতে হবে।
১৩. পশুসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া বিদেশ থেকে মুরগির বাচ্চা, ডিম, খাদ্য ও সরঞ্জামাদি আমদানি নিষেধ।
১৪. দেশের ভেতর থেকে বাচ্চা সংগ্রহের আগে নিশ্চিত হতে হবে, ওই খামারের গত এক বছরে কোনো রোগ দেখা দিয়েছে কি না।
১৫. অতিথি পাখি খামারের আশপাশে বা ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। খামারের কর্মীদেরও অতিথি পাখির কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ শীতকালে বিভিন্ন দেশে থেকে এ দেশে অতিথি পাখি আসে। পাখিগুলো বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করতে পারে।
১৬. কোনো হাঁস-মুরগি অসুস্খ হলে বা মারা গেলে সাথে সাথে জেলা বা উপজেলা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে জানাতে হবে।
১৭. মৃত মুরগি মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
১৮. খামারে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার জন্য একটিমাত্র পথ চালু থাকবে।
১৯. মুরগি ও ডিম বিক্রি করে খাঁচা, সরঞ্জামাদি ও যানবাহন পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে খামারে প্রবেশ করতে হবে। কারণ যেখানে মুরগি ও ডিম বিক্রি করা হবে, সেখানে অন্য মুরগি থেকে জীবাণু আসতে পারে।
২০. অবিক্রীত মুরগি ও ডিম খামারের ভেতর নেয়া যাবে না।
২১. হাঁস-মুরগিকে সময়মতো সব রোগের টিকা দিতে হবে।
২২. মুরগি, হাঁস, কবুতর ও অন্যান্য পাখি একত্রে পালন করা যাবে না।
২৩. অতিথি পাখি শিকার বìধ করা, বিক্রি বìধ করা এবং অতিথি পাখির কাছে যাওয়া নিষেধ।
২৪. বাড়িতে পালার জন্য বাজার থেকে কেনা মুরগি অন্তত ১৫ দিন আলাদা রেখে তারপর বাড়িতে মুরগির সাথে রাখতে হবে।
২৫. খামারের ভেতরে প্রবেশের সময় জীবাণুমুক্ত গ্লাভস, গামবুট, মাস্ক, টুপি ও এপ্রোন ব্যবহার করতে হবে।
২৬. এক শেডের যন্ত্রপাতি বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্য শেডে ব্যবহার করা যাবে না।
২৭. রোগাক্রান্ত হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ময়লা, বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
২৮. শেডের লিটার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে এবং শুকনা রাখার ব্যবস্খা করতে হবে।
২৯. মুরগির ঘরে কাজ করার সময় ভেতর থেকে দরজা বìধ রাখতে হবে।
৩০. মুরগির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে পশু হাসপাতালে জানাতে হবে। অস্বাভাবিক আচরণের মধ্যে রয়েছে মুরগি পরপর দু’দিন ২০ শতাংশ হারে পানি ও খাদ্য কম খেলে এবং ডিম উৎপাদন পর পর দু’দিন ২০ শতাংশ হারে কমলে।
৩১. লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।
৩২. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সুষম ও টাটকা খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
৩৩. জীবাণুনাশক হিসেবে সাবান, ডিটারজেন্ট, ভিরকন, ফার্ম ফ্লুইড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
১. খামারের প্রধান গেট তালা দিয়ে রাখতে হবে। ‘ জৈব নিরাপত্তা চালু আছে, প্রবেশ নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।
২. খামারের চার পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৩. খামারের শেডের পাশে খাদ্যদ্রব্য ফেলা যাবে না, এতে বন্যপাখি আসবে। বন্যপাখি বার্ড ফ্লুর ভাইরাস বহন করে।
৪. দর্শনার্থীদের এবং অন্য খামারের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
৫. খামারের ভেতরে নিয়োজিত কর্মীদের খামার কর্র্তৃক প্রদত্ত জীবাণুমুক্ত পোশাক, জুতা, টুপি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
৬. খামারের ভেতর প্রবেশের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, গাড়িসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করাতে হবে। এসব কিছুতে জীবাণুনাশক পদার্থ স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৭. খামারের ভেতর যারা থাকবে বা প্রবেশ করবে তাদের পরিধেয় সবকিছু জীবাণুমুক্ত হতে হবে।
৮. মুরগির ঘরের দরজ বìধ রাখতে হবে; যাতে বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, সাপ, বেজি ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে।
৯. এক খামারের লোক অন্য খামারে গোসল করতে জীবাণুমুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে। জীবাণু এক খামার থেকে অন্য খামারে প্রবেশ প্রতিরোধ করতে হবে।
১০. খামারের কর্মীদের বন্যপাখির দোকানে খাওয়া যাবে না।
১১. খামার পরিত্যাগের সময় খামারের বস্ত্রাদি পরিবর্তন করে হাত-পা ভালোভাবে ধুতে হবে।
১২. প্রতিটি শেডের সামনে পা ধোয়ার জীবাণুমুক্তকরণ তরল পদার্থ রাখতে হবে। শেডে প্রবেশের সময় পা জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করতে হবে।
১৩. পশুসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া বিদেশ থেকে মুরগির বাচ্চা, ডিম, খাদ্য ও সরঞ্জামাদি আমদানি নিষেধ।
১৪. দেশের ভেতর থেকে বাচ্চা সংগ্রহের আগে নিশ্চিত হতে হবে, ওই খামারের গত এক বছরে কোনো রোগ দেখা দিয়েছে কি না।
১৫. অতিথি পাখি খামারের আশপাশে বা ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। খামারের কর্মীদেরও অতিথি পাখির কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ শীতকালে বিভিন্ন দেশে থেকে এ দেশে অতিথি পাখি আসে। পাখিগুলো বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করতে পারে।
১৬. কোনো হাঁস-মুরগি অসুস্খ হলে বা মারা গেলে সাথে সাথে জেলা বা উপজেলা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে জানাতে হবে।
১৭. মৃত মুরগি মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
১৮. খামারে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার জন্য একটিমাত্র পথ চালু থাকবে।
১৯. মুরগি ও ডিম বিক্রি করে খাঁচা, সরঞ্জামাদি ও যানবাহন পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে খামারে প্রবেশ করতে হবে। কারণ যেখানে মুরগি ও ডিম বিক্রি করা হবে, সেখানে অন্য মুরগি থেকে জীবাণু আসতে পারে।
২০. অবিক্রীত মুরগি ও ডিম খামারের ভেতর নেয়া যাবে না।
২১. হাঁস-মুরগিকে সময়মতো সব রোগের টিকা দিতে হবে।
২২. মুরগি, হাঁস, কবুতর ও অন্যান্য পাখি একত্রে পালন করা যাবে না।
২৩. অতিথি পাখি শিকার বìধ করা, বিক্রি বìধ করা এবং অতিথি পাখির কাছে যাওয়া নিষেধ।
২৪. বাড়িতে পালার জন্য বাজার থেকে কেনা মুরগি অন্তত ১৫ দিন আলাদা রেখে তারপর বাড়িতে মুরগির সাথে রাখতে হবে।
২৫. খামারের ভেতরে প্রবেশের সময় জীবাণুমুক্ত গ্লাভস, গামবুট, মাস্ক, টুপি ও এপ্রোন ব্যবহার করতে হবে।
২৬. এক শেডের যন্ত্রপাতি বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্য শেডে ব্যবহার করা যাবে না।
২৭. রোগাক্রান্ত হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ময়লা, বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
২৮. শেডের লিটার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে এবং শুকনা রাখার ব্যবস্খা করতে হবে।
২৯. মুরগির ঘরে কাজ করার সময় ভেতর থেকে দরজা বìধ রাখতে হবে।
৩০. মুরগির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে পশু হাসপাতালে জানাতে হবে। অস্বাভাবিক আচরণের মধ্যে রয়েছে মুরগি পরপর দু’দিন ২০ শতাংশ হারে পানি ও খাদ্য কম খেলে এবং ডিম উৎপাদন পর পর দু’দিন ২০ শতাংশ হারে কমলে।
৩১. লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।
৩২. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সুষম ও টাটকা খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
৩৩. জীবাণুনাশক হিসেবে সাবান, ডিটারজেন্ট, ভিরকন, ফার্ম ফ্লুইড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্ষায় পোল্ট্রি খামারের যত্ন
আষাঢ়ের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ সময় পোল্ট্রি খামারিদের নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক নিয়মেই সময়টাতে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় বলে একটানা ও থেমে থেমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার হ্রাস-বৃদ্ধি, দেশের কোনো কোনো অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত, কোথাও ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, কোথাও বা থেমে থেমে দীর্ঘদিন বৃষ্টির কারণে অনেক সময় সঠিক খামার ব্যবস্থাপনা হুমকির সম্মুখীন হয়। এই অবস্থায় নিন্মোক্ত ব্যবস্থাগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখলে খামারি উপকৃত হবে-
পোল্ট্রি খামারে করণীয়: ১. পোল্ট্রি শেডের চারপাশে ৫ মিটার জায়গা অতিরিক্ত বাড়াতে হবে;
২. বাড়তি জায়গা ভালভাবে পরিস্কার এবং ঘাস ও ঝোপঝাড় মুক্ত রাখতে হবে; বাড়তি জায়গার উপরে ভালমত ছাউনি দিতে হবে; ৩. ছাদের যেকোনো ছিদ্র পূর্বেই সারিয়ে নিতে হবে;
৪. প্রয়োজনীয় পলিথিনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যদি অতিরিক্ত ছাউনি দেওয়া না হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত বৃষ্টির সময় সামনে ও পেছনে যেন চটের তৈরি আচ্ছাদন থাকে। বড় মুরগির ক্ষেত্রে বৃষ্টি না থাকলে তা উঠিয়ে রাখতে হবে যাতে ভালভাবে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে;
৫. বাচ্চা উঠানোর আগেই সকল পাকা মেঝে ভালমত রিপিয়ারিং করতে হবে এবং যতদিন সম্ভব শুষ্ক রাখা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে;
৬. খাবারের পাত্র যাতে যথাসম্ভব শুষ্ক রাখা যায় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে;
৭. লিটারের ক্ষেত্রে, জানালা এবং ঘরের পাশ দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢোকার সম্ভাব্য সব ছিদ্র বের করতে হবে এবং তা বন্ধ করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন লিটার শুষ্ক থাকে। শক্ত লিটার ভেঙ্গে দিয়ে নতুন লিটার ছড়িয়ে দিয়ে এবং শুষ্ক দ্রব্য যেমন: লাইম পাউডার, এমোনিয়াম সালফেট ইত্যাদি ব্যবহার করে শুষ্ক অবস্থা বজায় রাখতে হবে। অন্যথায় ভেজা লিটার কক্সিডিওসিস, এন্টারইটিস, কৃমি সংক্রমণের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হবে যা পোল্ট্রির জন্য ক্ষতিকর;
৮. যারা আখের ছোবড়া লিটার হিসেবে ব্যবহার করেন তাদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অন্যথায় Aspersillus fumigatus নামক মোল্ড জন্মাতে পারে যা ফুসফুসের কোষে প্রবেশ করে এবং বাচ্চাতে ব্রুডার নিউমোনিয়া ঘটায়।
৯. পোল্ট্রি শেডের আশেপাশে যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন রোগ-বালাই শেডে প্রবেশ করতে পারে।
খাবার প্রদানে করণীয়: বর্ষার সময় যাতে নতুন খাদ্য কেনা না লাগে এজন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত করা উচিত। অন্যথায়, পরিবহনের সময় খাদ্য পরিবেশ হতে আর্দ্রতা শোষন করবে। খাদ্য কেনার পর খাদ্যের ব্যাগ কাঠের মাচাতে রাখা উচিত। তবে মাচা যেন মেঝে থেকে এবং দেওয়াল থেকে এক ফুট দূরত্বে থাকে। পাকা ঘরের জন্য খাদ্য সংরক্ষণের রুম থাকা দরকার যা কোনোভাবেই ভেজা না থাকে। যদি ঘরের ভেতরের আর্দ্রতা বেশি থাকে অথবা পানি প্রবেশ করে এবং এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকে তবে ফাংগাস এবং মোল্ডের মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেবে। সবচেয়ে ভয়ংকর যে ফাংগাস ভুট্র সি ফিসমিল ইত্যাদিতে আক্রমণ করে তা হচ্ছে Aspergillus flavus । এই প্রজাতি হতে যে বিষ নিঃসৃত হয় তা আফলাটক্সিন বি ১, বি ২, জি ১, এবং জি ২ নামে পরিচিত। এর মধ্যে বি ১ হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক। এর ফলে ডিম উৎপাতন হ্রাস, বৃদ্ধি ব্যাহত, নিম্ন খাদ্যে রূপান্তর, লিভার টিউমার এমনকি লেয়ার ও ব্রয়লারের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। লেয়ারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ০.১ পিপিএম এবং ব্রয়লারের জন্য ০.০৫ পিপিএম বাস্তব ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রা। হাঁস এবং টার্কি, মুরগির চেয়ে বেশি সহনীয়। এজন্য খাদ্যে ভালমানের টক্সিন বাইন্ডার সাধারণ মানের চেয়ে একটু বেশি ভাল ব্যবহার করা উচিত।
সবদিক বিবেচনা করে একথা বলা যায় যে, বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই ভাল মানের খাদ্য কেনা উচিত। অন্যথায় বিক্রেতার গোডাউনে অধিক আর্দ্রতার কারণে তা অক্সিডাইজড হয়ে যেতে পারে। এমন খাদ্য কিনতে হবে যাতে সঠিক মাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট যোগ করা থাকে। ফলে খাদ্যের গুণগতমান অক্ষুন্ন থাকবে।
বর্ষাকালে ঝিনুকের অভাব দেখা যায়। যেহেতু ঝিনুক সস্তা খাদ্য উপাদান এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় তাই ভাল সিদ্ধান্ত হবে যদি আগেই কিনে মজুদ করা যায়।
তবে যে কোনো খাদ্য মজুদের পূর্বেই ঘরের তাপ কি পরিমাণ সংরক্ষণ করা যাবে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। লক্ষ্যণীয় যে, ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক সংরক্ষণ করা যাবে না।
পানির ব্যবস্থাপনা: বর্ষাকালে পুকুর, নদী, টিউবওয়েল এমনকি ট্যাপের পানি পর্যন্ত জীবাণু দ্বারা দূষিত হয় যা প্রাকৃতিকভাবেই মাটিযুক্ত বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ঘটে থাকে। ভাল পানি পেতে হলে এলাম দ্বারা পরিশোধন করে এবং ২৪ ঘণ্টা ধরে অধঃক্ষেপন করতে হবে। পানি বিশুদ্ধ করার অন্য উপায় হচ্ছে ৩৫ ভাগ ক্লোরিন যুক্ত করা যা ২ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ১০০০ লিটার খাবার পানির সাথে মিশ্রণ করে পাওয়া যায়। এ পানি মিশ্রণের ৩ ঘণ্টা পরে প্রয়োগ করতে হবে।
লিটার ব্যবস্থাপনা: যখন পোল্ট্রিকে ডিপ লিটার পদ্ধতিতে পালন করা হয় তখন তা সবসময় শুষ্ক রাখা উচিত। সাধারণত ২৫ ভাগ আর্দ্রতা থাকে তৈরিকৃত লিটারে। লিটারের অবস্থা বোঝার জন্য একমুঠো লিটার হাতে নিয়ে হালকা চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলে যদি লিটার বলের মত আকৃতির না হয় এবং এক সাথে পড়ে তবে বুঝতে হবে লিটারের অবস্থা ভাল। মনে রাখা দরকার, লিটারের অবস্থা ভাল রাখতে হলে সপ্তাহে অন্তত একদিন লিটার নেড়ে দিতে হবে। যদি লিটারের কোনো অংশ ভিজে যায় তবে দ্রুত তা সরিয়ে নতুন শুষ্ক লিটার দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, ভেজা লিটার কক্সিডিওসিস এর মত জীবনঘাতি জীবাণুর বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ হিসেবে কাজ করে।
মল ব্যবস্থাপনা: পোল্ট্রি মল রোগ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর লিটার থেকে মল সরিয়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় মলের উপরে জীবাণুনাশক যেমন ভিরকন, মেলাথিয়ন ইত্যাদি ছিটিয়ে দিতে হবে। বর্ষায় মশা, মাছি এবং অন্যান্য পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। তাই শেডের চারপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করে শেডকে রোগমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
পোল্ট্রি খামারে করণীয়: ১. পোল্ট্রি শেডের চারপাশে ৫ মিটার জায়গা অতিরিক্ত বাড়াতে হবে;
২. বাড়তি জায়গা ভালভাবে পরিস্কার এবং ঘাস ও ঝোপঝাড় মুক্ত রাখতে হবে; বাড়তি জায়গার উপরে ভালমত ছাউনি দিতে হবে; ৩. ছাদের যেকোনো ছিদ্র পূর্বেই সারিয়ে নিতে হবে;
৪. প্রয়োজনীয় পলিথিনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যদি অতিরিক্ত ছাউনি দেওয়া না হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত বৃষ্টির সময় সামনে ও পেছনে যেন চটের তৈরি আচ্ছাদন থাকে। বড় মুরগির ক্ষেত্রে বৃষ্টি না থাকলে তা উঠিয়ে রাখতে হবে যাতে ভালভাবে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে;
৫. বাচ্চা উঠানোর আগেই সকল পাকা মেঝে ভালমত রিপিয়ারিং করতে হবে এবং যতদিন সম্ভব শুষ্ক রাখা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে;
৬. খাবারের পাত্র যাতে যথাসম্ভব শুষ্ক রাখা যায় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে;
৭. লিটারের ক্ষেত্রে, জানালা এবং ঘরের পাশ দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢোকার সম্ভাব্য সব ছিদ্র বের করতে হবে এবং তা বন্ধ করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন লিটার শুষ্ক থাকে। শক্ত লিটার ভেঙ্গে দিয়ে নতুন লিটার ছড়িয়ে দিয়ে এবং শুষ্ক দ্রব্য যেমন: লাইম পাউডার, এমোনিয়াম সালফেট ইত্যাদি ব্যবহার করে শুষ্ক অবস্থা বজায় রাখতে হবে। অন্যথায় ভেজা লিটার কক্সিডিওসিস, এন্টারইটিস, কৃমি সংক্রমণের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হবে যা পোল্ট্রির জন্য ক্ষতিকর;
৮. যারা আখের ছোবড়া লিটার হিসেবে ব্যবহার করেন তাদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অন্যথায় Aspersillus fumigatus নামক মোল্ড জন্মাতে পারে যা ফুসফুসের কোষে প্রবেশ করে এবং বাচ্চাতে ব্রুডার নিউমোনিয়া ঘটায়।
৯. পোল্ট্রি শেডের আশেপাশে যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন রোগ-বালাই শেডে প্রবেশ করতে পারে।
খাবার প্রদানে করণীয়: বর্ষার সময় যাতে নতুন খাদ্য কেনা না লাগে এজন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত করা উচিত। অন্যথায়, পরিবহনের সময় খাদ্য পরিবেশ হতে আর্দ্রতা শোষন করবে। খাদ্য কেনার পর খাদ্যের ব্যাগ কাঠের মাচাতে রাখা উচিত। তবে মাচা যেন মেঝে থেকে এবং দেওয়াল থেকে এক ফুট দূরত্বে থাকে। পাকা ঘরের জন্য খাদ্য সংরক্ষণের রুম থাকা দরকার যা কোনোভাবেই ভেজা না থাকে। যদি ঘরের ভেতরের আর্দ্রতা বেশি থাকে অথবা পানি প্রবেশ করে এবং এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকে তবে ফাংগাস এবং মোল্ডের মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেবে। সবচেয়ে ভয়ংকর যে ফাংগাস ভুট্র সি ফিসমিল ইত্যাদিতে আক্রমণ করে তা হচ্ছে Aspergillus flavus । এই প্রজাতি হতে যে বিষ নিঃসৃত হয় তা আফলাটক্সিন বি ১, বি ২, জি ১, এবং জি ২ নামে পরিচিত। এর মধ্যে বি ১ হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক। এর ফলে ডিম উৎপাতন হ্রাস, বৃদ্ধি ব্যাহত, নিম্ন খাদ্যে রূপান্তর, লিভার টিউমার এমনকি লেয়ার ও ব্রয়লারের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। লেয়ারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ০.১ পিপিএম এবং ব্রয়লারের জন্য ০.০৫ পিপিএম বাস্তব ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রা। হাঁস এবং টার্কি, মুরগির চেয়ে বেশি সহনীয়। এজন্য খাদ্যে ভালমানের টক্সিন বাইন্ডার সাধারণ মানের চেয়ে একটু বেশি ভাল ব্যবহার করা উচিত।
সবদিক বিবেচনা করে একথা বলা যায় যে, বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই ভাল মানের খাদ্য কেনা উচিত। অন্যথায় বিক্রেতার গোডাউনে অধিক আর্দ্রতার কারণে তা অক্সিডাইজড হয়ে যেতে পারে। এমন খাদ্য কিনতে হবে যাতে সঠিক মাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট যোগ করা থাকে। ফলে খাদ্যের গুণগতমান অক্ষুন্ন থাকবে।
বর্ষাকালে ঝিনুকের অভাব দেখা যায়। যেহেতু ঝিনুক সস্তা খাদ্য উপাদান এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় তাই ভাল সিদ্ধান্ত হবে যদি আগেই কিনে মজুদ করা যায়।
তবে যে কোনো খাদ্য মজুদের পূর্বেই ঘরের তাপ কি পরিমাণ সংরক্ষণ করা যাবে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। লক্ষ্যণীয় যে, ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক সংরক্ষণ করা যাবে না।
পানির ব্যবস্থাপনা: বর্ষাকালে পুকুর, নদী, টিউবওয়েল এমনকি ট্যাপের পানি পর্যন্ত জীবাণু দ্বারা দূষিত হয় যা প্রাকৃতিকভাবেই মাটিযুক্ত বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ঘটে থাকে। ভাল পানি পেতে হলে এলাম দ্বারা পরিশোধন করে এবং ২৪ ঘণ্টা ধরে অধঃক্ষেপন করতে হবে। পানি বিশুদ্ধ করার অন্য উপায় হচ্ছে ৩৫ ভাগ ক্লোরিন যুক্ত করা যা ২ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ১০০০ লিটার খাবার পানির সাথে মিশ্রণ করে পাওয়া যায়। এ পানি মিশ্রণের ৩ ঘণ্টা পরে প্রয়োগ করতে হবে।
লিটার ব্যবস্থাপনা: যখন পোল্ট্রিকে ডিপ লিটার পদ্ধতিতে পালন করা হয় তখন তা সবসময় শুষ্ক রাখা উচিত। সাধারণত ২৫ ভাগ আর্দ্রতা থাকে তৈরিকৃত লিটারে। লিটারের অবস্থা বোঝার জন্য একমুঠো লিটার হাতে নিয়ে হালকা চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলে যদি লিটার বলের মত আকৃতির না হয় এবং এক সাথে পড়ে তবে বুঝতে হবে লিটারের অবস্থা ভাল। মনে রাখা দরকার, লিটারের অবস্থা ভাল রাখতে হলে সপ্তাহে অন্তত একদিন লিটার নেড়ে দিতে হবে। যদি লিটারের কোনো অংশ ভিজে যায় তবে দ্রুত তা সরিয়ে নতুন শুষ্ক লিটার দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, ভেজা লিটার কক্সিডিওসিস এর মত জীবনঘাতি জীবাণুর বৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ হিসেবে কাজ করে।
মল ব্যবস্থাপনা: পোল্ট্রি মল রোগ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর লিটার থেকে মল সরিয়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় মলের উপরে জীবাণুনাশক যেমন ভিরকন, মেলাথিয়ন ইত্যাদি ছিটিয়ে দিতে হবে। বর্ষায় মশা, মাছি এবং অন্যান্য পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। তাই শেডের চারপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করে শেডকে রোগমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
গরমে পোল্ট্রি খামারের বাড়তি যত্ন
প্রাণীজ আমিষের বড় একটা অংশ আসে পোল্ট্রি শিল্প হতে। প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই এ শিল্পের সুদৃঢ় ভবিষ্যত্ চিন্তা করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। গরম কাল এ পোল্ট্রি খামারের বিশেষ যত্ন না নিলে কমে যেতে পারে ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি এবং লেয়ার খামারের ডিম সংখ্যা। সে কারণেই নিচের টিপসসমূহ খামারি ভাইদের খুবই কাজে লাগবে:
পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এর প্রভাব: ঘর্মগ্রন্থি না থাকার কারণে মোরগ-মুরগির অতিরিক্ত গরম অসহ্য লাগে। এতে উত্পাদন ক্ষমতা ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত তাপে এদের পানি গ্রহণ, শ্বাস-প্রশ্বাস, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার, রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন, রক্তে ক্যালসিয়ামের সমতা, খাদ্য গ্রহণ, শরীরের ওজন ও ডিমের উত্পাদন হ্রাস পায়। ১৫ হতে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এদের উত্পাদন সর্বোচ্চ। ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে শতকরা ৪ ভাগ হারে পানি গ্রহণ বৃদ্ধি পায়। ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পর হতে ডিমের সংখ্যা না কমলেও প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ডিমের ওজন শতকরা এক ভাগ হারে কমে যায়। ২৬.৫ সেলসিয়াস ডিগ্রি তাপমাত্রার পর হতে মোরগ-মুরগির খাদ্যের রূপান্তর ক্ষমতা হ্রাস পায়। ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে প্রতি ডিগ্রি তাপ বৃদ্ধিতে ২ হতে ৪ শতাংশ খাবার গ্রহণ কমে যায়। ৩৬ হতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মোরগ-মুরগির জন্য অসহনীয় এবং ৩৮ ডিগ্রির পর মৃত্যু হার খুব বৃদ্ধি পায়।
তাপজনিত ধকল প্রতিরোধে করণীয়: খামারের আশে পাশে ছায়াযুক্ত বৃক্ষ রোপণ এবং ঘর পূর্ব-পশ্চিমে হওয়া বাঞ্চনীয়। তবে আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনায় বায়োসিকিউরিটির কথা চিন্তা করে গাছপালা রোপণের প্রতি অনুত্সাহিত করা হয়ে থাকে। গরমে পোল্ট্রি শেডে প্রত্যক্ষ সূর্যালোক পরা যাবে না। অত্যধিক গরম প্রতিরোধে প্রয়োজনে শেডের ছাদে/বা টিনের চালায় দিনে দু’তিন বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টিনের নিচে চাটাই/হার্ডবোর্ড দিয়ে সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় মুরগি যখন হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় তখন ঘরে সেপ্র মেশিন দিয়ে কুয়াশার মত করে পানি ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পানির ড্রিংকার ও ফিডারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ঘন ঘন ড্রিংকারের পানি পাল্টাতে হবে। গরমে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে শেডের মেঝে অনেক সময় স্যাঁতসেঁতে হয়ে লিটার দ্রুত ভিজে যায়। ফলে রোগের আক্রমণও বাড়ে। সেজন্য প্রতিদিন সকালে ব্রয়লার শেডের লিটার উলোট-পালোট করা প্রয়োজন। লিটারে গুঁড়ো চুন ব্যবহার করলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। শেড হতে শেডের দূরত্ব ৩০ ফুটের অধিক হলে ভাল হয়। শেডে মোরগ-মুরগির ঘনত্ব বেশি হলে তা কমিয়ে দিতে হবে। বাতাসের অবাধ চলাচল শেডের ভেতরের তাপমাত্রা শীতল রাখতে সাহায্য করবে এবং পোল্ট্রির জন্য ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাস মুক্ত রাখবে। শেডে স্টেন্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
গরমে পোল্ট্রি খামারে খাবার ব্যবস্থাপনা: ঠাণ্ডা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। যেহেতু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এদের খাদ্য গ্রহণ কমে যায়, সেহেতু প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ৮ হতে ১০ ভাগ শক্তি কমিয়ে প্রোটিন, খনিজ লবণ ও ভিটামিন বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ১০-১২ গ্রাম গ্লুকোজ ও মুরগি প্রতি ১০ গ্রাম ভিটামিন সি পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক বিটেইনে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক আছে যা কোষের মধ্যে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হিট স্ট্রোকের হাত থেকে এরা রক্ষা পায়। গরমে পোল্ট্রির অ্যামাইনো এসিডের চাহিদা বেড়ে যায়। বিটেইনে মিথাইল মূলক বিদ্যমান, যা মিথিওনিন ও কলিনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। গরমে প্রয়োজনে একদিনের বাচ্চার জন্য পানিতে আখের গুড়, ভিটামিন সি অথবা ইলেকট্রোলাইট যুক্ত স্যালাইন পানি দিতে হবে।
লেখক: ডা. সুমন তালুকদার (রুনু) , সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এর প্রভাব: ঘর্মগ্রন্থি না থাকার কারণে মোরগ-মুরগির অতিরিক্ত গরম অসহ্য লাগে। এতে উত্পাদন ক্ষমতা ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত তাপে এদের পানি গ্রহণ, শ্বাস-প্রশ্বাস, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার, রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন, রক্তে ক্যালসিয়ামের সমতা, খাদ্য গ্রহণ, শরীরের ওজন ও ডিমের উত্পাদন হ্রাস পায়। ১৫ হতে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এদের উত্পাদন সর্বোচ্চ। ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে শতকরা ৪ ভাগ হারে পানি গ্রহণ বৃদ্ধি পায়। ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পর হতে ডিমের সংখ্যা না কমলেও প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ডিমের ওজন শতকরা এক ভাগ হারে কমে যায়। ২৬.৫ সেলসিয়াস ডিগ্রি তাপমাত্রার পর হতে মোরগ-মুরগির খাদ্যের রূপান্তর ক্ষমতা হ্রাস পায়। ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে প্রতি ডিগ্রি তাপ বৃদ্ধিতে ২ হতে ৪ শতাংশ খাবার গ্রহণ কমে যায়। ৩৬ হতে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মোরগ-মুরগির জন্য অসহনীয় এবং ৩৮ ডিগ্রির পর মৃত্যু হার খুব বৃদ্ধি পায়।
তাপজনিত ধকল প্রতিরোধে করণীয়: খামারের আশে পাশে ছায়াযুক্ত বৃক্ষ রোপণ এবং ঘর পূর্ব-পশ্চিমে হওয়া বাঞ্চনীয়। তবে আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনায় বায়োসিকিউরিটির কথা চিন্তা করে গাছপালা রোপণের প্রতি অনুত্সাহিত করা হয়ে থাকে। গরমে পোল্ট্রি শেডে প্রত্যক্ষ সূর্যালোক পরা যাবে না। অত্যধিক গরম প্রতিরোধে প্রয়োজনে শেডের ছাদে/বা টিনের চালায় দিনে দু’তিন বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টিনের নিচে চাটাই/হার্ডবোর্ড দিয়ে সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় মুরগি যখন হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় তখন ঘরে সেপ্র মেশিন দিয়ে কুয়াশার মত করে পানি ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পানির ড্রিংকার ও ফিডারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ঘন ঘন ড্রিংকারের পানি পাল্টাতে হবে। গরমে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে শেডের মেঝে অনেক সময় স্যাঁতসেঁতে হয়ে লিটার দ্রুত ভিজে যায়। ফলে রোগের আক্রমণও বাড়ে। সেজন্য প্রতিদিন সকালে ব্রয়লার শেডের লিটার উলোট-পালোট করা প্রয়োজন। লিটারে গুঁড়ো চুন ব্যবহার করলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। শেড হতে শেডের দূরত্ব ৩০ ফুটের অধিক হলে ভাল হয়। শেডে মোরগ-মুরগির ঘনত্ব বেশি হলে তা কমিয়ে দিতে হবে। বাতাসের অবাধ চলাচল শেডের ভেতরের তাপমাত্রা শীতল রাখতে সাহায্য করবে এবং পোল্ট্রির জন্য ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাস মুক্ত রাখবে। শেডে স্টেন্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
গরমে পোল্ট্রি খামারে খাবার ব্যবস্থাপনা: ঠাণ্ডা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। যেহেতু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এদের খাদ্য গ্রহণ কমে যায়, সেহেতু প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ৮ হতে ১০ ভাগ শক্তি কমিয়ে প্রোটিন, খনিজ লবণ ও ভিটামিন বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ১০-১২ গ্রাম গ্লুকোজ ও মুরগি প্রতি ১০ গ্রাম ভিটামিন সি পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক বিটেইনে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক আছে যা কোষের মধ্যে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হিট স্ট্রোকের হাত থেকে এরা রক্ষা পায়। গরমে পোল্ট্রির অ্যামাইনো এসিডের চাহিদা বেড়ে যায়। বিটেইনে মিথাইল মূলক বিদ্যমান, যা মিথিওনিন ও কলিনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। গরমে প্রয়োজনে একদিনের বাচ্চার জন্য পানিতে আখের গুড়, ভিটামিন সি অথবা ইলেকট্রোলাইট যুক্ত স্যালাইন পানি দিতে হবে।
লেখক: ডা. সুমন তালুকদার (রুনু) , সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
মুরগীর জটিল রোগ নির্নয় পদ্ধতি ও তার প্রতিকার
মুরগি পালন লাভজনক হলেও বিভিন্ন প্রকার রোগ এ লাভের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর বিভিন্ন রোগের কারণে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। তাছাড়াও রোগ নিরাময়, রোগ নির্ণয় করতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ঔষধ আনতে হয়। মুরগির রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময় করা সহজ হয়। কিন্তু এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে আনা হয় বিভিন্ন কিট, যা অনেক ব্যয়বহুল। এসব দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক এমদাদুল হক চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন মুরগির দুটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ সালমোনেলোসিস ও মাইকোপস্নাজমসিস নির্ণয়ের দেশি প্রযুক্তির কিট। এগুলো ব্যবহার করে খুব কম সময়ে সহজে ও অতি অল্প খরচে নির্ভুলভাবে রোগ দুটি নির্ণয় করা সম্ভব।
সালমোনেলোসিস মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে মুরগির মৃতু্যর হার বেশি এবং মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভুক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এটেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path S-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলুসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাবে।
মাইকোপস্নাজমসিস মুরগির আরেকটি মাইকোপস্নাজমাজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগেও খামারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইকোপস্নাজমা গোত্রভুক্ত চার ধরনের প্রজাতি দ্বারা মুরগি, তিতির ও অন্যান্য পাখির এ রোগ দেখা দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা আমদানি নির্ভর এবং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্প খরচে এবং নির্ভুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path Mg-Antigen Kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মাইকোপেস্নাজমসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।
"BAU
Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালীর স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সালমোনিলা ও মাইকোপস্নাজমা হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটি ৪০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গস্নাস সস্নাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। সস্নাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন (BAU Path Mg-Antigen Kit) এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উলেস্নখ্য যে, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে।
বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানি নির্ভর ব্যয়বহুল এবং এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ সনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে সস্নাইডে গোলাপী রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ উদ্ভাবিত "BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" কিট দুটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একদিকে রোগটি স্বল্প খরচে দ্রুততার সাথে সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, অপরদিকে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
মুরগি পালন লাভজনক হলেও বিভিন্ন প্রকার রোগ এ লাভের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর বিভিন্ন রোগের কারণে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। তাছাড়াও রোগ নিরাময়, রোগ নির্ণয় করতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ঔষধ আনতে হয়। মুরগির রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময় করা সহজ হয়। কিন্তু এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে আনা হয় বিভিন্ন কিট, যা অনেক ব্যয়বহুল। এসব দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক এমদাদুল হক চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন মুরগির দুটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ সালমোনেলোসিস ও মাইকোপস্নাজমসিস নির্ণয়ের দেশি প্রযুক্তির কিট। এগুলো ব্যবহার করে খুব কম সময়ে সহজে ও অতি অল্প খরচে নির্ভুলভাবে রোগ দুটি নির্ণয় করা সম্ভব।
সালমোনেলোসিস মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে মুরগির মৃতু্যর হার বেশি এবং মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভুক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এটেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path S-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলুসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাবে।
মাইকোপস্নাজমসিস মুরগির আরেকটি মাইকোপস্নাজমাজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগেও খামারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইকোপস্নাজমা গোত্রভুক্ত চার ধরনের প্রজাতি দ্বারা মুরগি, তিতির ও অন্যান্য পাখির এ রোগ দেখা দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা আমদানি নির্ভর এবং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্প খরচে এবং নির্ভুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path Mg-Antigen Kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মাইকোপেস্নাজমসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।
"BAU
Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালীর স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সালমোনিলা ও মাইকোপস্নাজমা হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটি ৪০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গস্নাস সস্নাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। সস্নাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন (BAU Path Mg-Antigen Kit) এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উলেস্নখ্য যে, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে।
বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানি নির্ভর ব্যয়বহুল এবং এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ সনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে সস্নাইডে গোলাপী রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ উদ্ভাবিত "BAU Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-Antigen Kit" কিট দুটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একদিকে রোগটি স্বল্প খরচে দ্রুততার সাথে সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, অপরদিকে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)